২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল

নিয়মের মধ্যে আনতে হবে

-

দেশে গণপরিবহন প্রয়োজনের তুলনায় এত কম যে, যাত্রীদের যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে দুর্ভোগে পড়তে হয়। গণপরিবহনের অভাবে যেকোনো বাহনে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। বিশেষত নির্দিষ্ট সময়ে যথাস্থানে পৌঁছানোর তাগিদে নিরাপদ-অনিরাপদ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বাছাইয়ে বাছবিচারের অবকাশ থাকে না। ফলে সড়কে প্রতিনিয়ত ঝরছে প্রাণ।
আমাদের দেশের বাস্তবতায় যাত্রীসাধারণের চাহিদা অনুযায়ী গণপরিবহন স্বল্পতায় ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন শূন্যস্থান পূরণ করছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে বিপুল অবৈধ যানবাহন যাত্রী পরিবহন করে থাকে। সরকার নিবন্ধন দেয় না বলে এগুলো অবৈধ যানবাহন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলোর মধ্যে ব্যাটারি ও ইঞ্জিনচালিত অটোরিকশার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সিদ্ধান্তের পর ঢাকাসহ সারা দেশে অবৈধ এসব যান স্রোতের মতো নামতে শুরু করে। এসব রিকশা আগে চলত অলিগলিতে। এখন মূল সড়কে নেমে গেছে। শেখ হাসিনা রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
বিআরটিএ, যাত্রী অধিকার সংগঠন, পুলিশ ও অন্যান্য অংশীজনের হিসাবে, ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত তিন চাকার অবৈধ যানবাহন এখন ৬০ লক্ষাধিক। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আছে প্রায় ৫০ লাখ। ঢাকায় আছে ১০ লাখের মতো। কারো মতে, ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত রিকশার সংখ্যা ১৫ লাখের কম হবে না।
বৈধ যানের ২ শতাংশের কম বাস-মিনিবাসসহ গণপরিবহন। চাহিদার তুলনায় গণপরিবহন স্বল্পতার সুযোগে কারিগরিভাবে ত্রুটিপূর্ণ তিন চাকার ব্যাটারি ও ইঞ্জিনচালিত রিকশায় ঢাকাসহ সারা দেশ ছেয়ে গেছে। এসব যান বাড়তে দিয়ে এখন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না; বরং ত্রুটিপূর্ণ এ যানবাহনগুলো দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে আদালতের এ আদেশের পরে সড়কে রিকশা চালানোর দাবিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কত বিপজ্জনক তা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যে স্পষ্ট। সংস্থার পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সড়কে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তিন চাকার যানবাহনের দুর্ঘটনা। অবৈধ এই যানের চলাচল বহাল রাখতে বিপুল চাঁদা দিতে হয় চালক-মালিকদের। আর এই চাঁদার ভাগীদার পুলিশ ও রাজনীতিকরা। গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চাঁদার নিয়ন্ত্রণ করতেন।
তিন চাকার যানগুলোর কাঠামোগত ও যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো: হাদীউজ্জামান একটি সহযোগী দৈনিককে বলেছেন, ত্রুটিযুক্ত এসব যানের চলাচল নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এসব যানবাহনের সাথে যত মানুষের জীবিকা যুক্ত রয়েছে তাতে এটি হুট করে বন্ধ করা যাবে না।
আমরাও মনে করি, শুরুতে এসব যান নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভালো হতো। এখন এগুলোর সংযোজন, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসার সাথে স্থানীয় রাজনীতিকরা জড়িত বলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। এসব যান নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালার আওতায় কারিগরিভাবে উন্নয়ন করতে হবে, যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। একই সাথে কোন সড়কে কত যান চলতে পারবে তার একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement