ব্যাংক গ্রাহক ফেরাবেন না
- ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দৈনিক নয়া দিগন্তের মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা থেকে টাকা না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন গ্রাহকরা। নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা থাকার পরও ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলতে পারছেন না গ্রাহকরা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রতিদিন গ্রাহকদের দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিলেও বেশির ভাগ ব্যাংক গ্রাহকদের জমানো টাকা দিচ্ছে না। ন্যাশনাল ব্যাংক মিরসরাই শাখা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বারইয়ার হাট শাখা, মিঠাছড়া বাজার উপ শাখা, ইউনিয়ন ব্যাংক জোরারগঞ্জ বাজার শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক করেরহাট শাখা, বারইয়ারহাট উপ শাখা, বড়তাকিয়া শাখা, আবু তোরাব উপ শাখা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গ্রাহকরা টাকা তুলতে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। ব্যাংকগুলোতে টাকা তোলার জন্য প্রতিদিন ১০০-১৫০ গ্রাহক জড়ো হন; কিন্তু ব্যাংকের শাখাগুলোতে তারল্যসঙ্কট থাকায় এবং গ্রাহকরা নতুন করে টাকা জমা না দেয়ায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) ও রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) বন্ধ থাকার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম বুথেও টাকা দেয়া বন্ধ থাকার কারণে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে উঠেছে। শাখাগুলোতে দেখা যায়, গ্রাহকরা চেকে স্বাক্ষর করে টাকার অঙ্ক না লিখে তা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছে রেখে যাচ্ছে। যেন ব্যাংকে টাকা জমা হলে সামান্য কিছু টাকা হলেও পান, সে আশায়।
ন্যাশনাল ব্যাংক মিরসরাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ২০-২৫ জন গ্রাহক জড়ো হয়ে আছেন ব্যাংকটির ক্যাশ কাউন্টার ও ব্যবস্থাপকের কক্ষের সামনে। গ্রাহকরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও টাকা পাচ্ছেন না।
ব্যাংকের গ্রাহক মঈনুল ইসলাম বলেন, বিদেশ থেকে আসা অনেক টাকা অ্যাকাউন্টে রয়েছে। ব্যাংকে এসে আজ বলে কাল টাকা দেবে।
এক গ্রাহক বলেন, নতুন ঘর নির্মাণের জন্য অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রেখেছি। ঘরের কাজ শুরু করেও টাকার জন্য আটকে গেছি। ব্যাংকে এলে পাঁচ হাজার টাকার বেশি দিতে চায় না। আক্তার হোসেন নামে এক গ্রাহক জানান, ৫০ হাজার টাকার একটি চেক নিয়ে দুই সপ্তাহ ঘুরছি। ব্যাংক টাকা দিচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকে এসে টাকা না পেয়ে বিপদে পড়ে গেছি।
নাজির আলম নামে এক গ্রাহক বলেন, আমার চার লাখ টাকা জমা আছে। কয়েক সপ্তাহ ঘুরেও কোনো টাকা তুলতে পারিনি। ন্যাশনাল ব্যাংক মিরসরাই শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গনি বলেন, আগে প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাহক টাকা উত্তোলন করার জন্য আসার পাশাপাশি প্রায় সমানসংখ্যক গ্রাহক টাকা জমা দিতেও আসতেন; কিন্তু বর্তমানে টাকা জমা দিতে কেউ আসছেন না। সবাই শুধু টাকা উত্তোলন করতে আসছেন। তা ছাড়া হেড অফিস থেকেও পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা দেয়া হচ্ছে না। যে পরিমাণ টাকা আসে তা ভাগ করে পাঁচ-দশ হাজার করে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মিঠাছড়া বাজার উপ শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংকের মধ্যে সুনসান অবস্থা, নেই কোনো কোলাহল। কিছুক্ষণ পরপর দু-একজন করে গ্রাহক আসেন চেক নিয়ে টাকা তুলতে; কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সব গ্রাহককে একই কথা বলছেন, টাকা নেই; এলে দেয়া হবে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক মিঠাছড়া বাজার উপ শাখার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবদুল গফুর বলেন, গত দুই সপ্তাহে পাঁচ লাখ টাকা করে ১০ লাখ টাকা হেড অফিস থেকে এসেছিল। সেটি থেকে গ্রাহকদের পাঁচ-দশ হাজার টাকা করে দিয়েছি। এই সপ্তাহে হেড অফিস থেকে কোনো টাকা না আসায় গ্রাহকদের টাকা দিতে পারিনি। ইউনিয়ন ব্যাংকের জোরারগঞ্জ শাখায় টাকা তুলতে আসা গ্রাহক আলেয়া বেগম বলেন, গত দুই সপ্তাহ টাকা তুলতে পারিনি। ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ সানজিদ হোসাইন বলেন, ব্যাংকে গ্রাহক টাকা জমা দিচ্ছেন না। সবাই শুধু নিতে আসেন। আমাদের শাখা থেকে যারা লোন নিয়েছেন তাদের বেশির ভাগ মৎস্যচাষি ছিলেন। এবারের বন্যায় অনেকের মাছ ভেসে গেছে। তাই তারাও ঋণের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করছেন না। প্রতিদিন গ্রাহকের টাকা জমা প্রদান সাপেক্ষে পাঁচ-দশ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক বারইয়ারহাট উপ শাখার কর্মকর্তা পলাশ জানান, সব গ্রাহক একসাথে টাকা উত্তোলন করতে আসায় চাপ বেড়ে গেছে। করেরহাট মূল শাখায় প্রতিদিন দুই লাখ টাকা আর বারইয়ারহাটের উপ শাখায় ৪০ হাজার টাকা করে দেয়া হয় গ্রাহকদের জন্য। সেখান থেকে দুই-তিন হাজার টাকা করে গ্রাহকদের দেয়া হয়।
ব্যাংকের প্রাণ এর গ্রাহকরা। তারা কেন ফিরে যাচ্ছেন, এটা অনুসন্ধানের বিষয়। কোনো অবস্থাতেই তাদের টাকা মার যেতে পারে না। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা