২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
প্রধান উপদেষ্টার আশা জাগানিয়া ভাষণ

নতুন দেশ নির্মাণে ঐক্য প্রত্যাশা

-

এক শ’ দিন পূর্তি উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। এতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। সরকারের মূল বিষয় সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, দুটো চলমান থাকবে। একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিয়েছে। আশঙ্কা ছিল যেকোনো সময় দেশের অর্থব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। অর্থনীতির এ নড়বড়ে অবস্থা সরকার মোকাবেলা করে যাচ্ছে। মুখথুবড়ে পড়া ব্যাংকব্যবস্থা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম না হলেও টালমাটাল অবস্থা সামলে উঠেছে। আশাবাদ জেড়েছে, নতুন করে কোনো অনিয়ম না হলে লুটপাটের শিকার ব্যাংক খাত একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থিতাবস্থা ফিরে পাবে। ভাষণে ড. ইউনূস দুর্নীতি দমন, বিনিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সময়সূচি প্রকাশে তাগিদ দিচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে এ সরকার ক্ষমতা নিয়েছে এমন এক অবস্থায় যখন রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে পড়েছে। অন্য দিকে হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল। এই পরিস্থিতিতে ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গণ-অভ্যুত্থান সঙ্ঘটিত হয়। ড. ইউনূস নিজেও একবার বলেছেন, তার নিয়োগকর্তা বিপ্লবী ছাত্ররা। সে কারণে শুধু নির্বাচন এ সরকারের লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য বিপুল সংস্কার সাধন। সে জন্য একটি যৌক্তিক সময়ও অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে। এ ব্যাপারে পক্ষগুলো একমত নয় যে, একটি নির্বাচন হলে টেকসই সরকার ব্যবস্থা কায়েম হবে, সেখানে নতুন করে ফ্যাসিবাদ গেড়ে বসবে না। ভাষণে তিনি বলেছেন, নির্বাচনও হবে সংস্কারও চলবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিত করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে সরকারের কিছু সফলতা তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন, তা থেকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও অন্যান্য ঋণ ও অনুদান দেয় এমন প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অর্থ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এ অর্থ দেশে আসা শুরু হলে অর্থনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সরকারের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি দেশের প্রতিনিধিরা একসাথে অচিরে সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। এমন সম্মিলিত উদ্যোগ এর আগে দেখা যায়নি বলে ভাষণে উল্লেখ করেন তিনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা আশিয়ানের সদস্য পদ পাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। প্রশাসনেকে সক্রিয় করতে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতি বদলি ও শাস্তি দেয়া হয়েছে। প্রশাসন কাজের উপযুক্ত করতে সরকারকে বেগ পেতে হয়েছে। অধিকার আদায়ে অসংখ্য পক্ষ রাস্তায় নেমে আসে, এর সাথে শুরু হয় শ্রমিক অসন্তোষ। ভাষণে তিনি এগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মোকাবেলার কথা উল্লেখ করেন।

সামনে রয়েছে গণহত্যাকারী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার। এটি করা না গেলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এর সাথে রয়েছে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জটিল কাজ। অন্য দিকে রয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসরদের পক্ষ থেকে সবকিছু ভণ্ডুল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চক্রান্ত। এ ধরনের কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে অধ্যাপক ড. ইউনূসের মতো একজন নেতার প্রয়োজন।
ড. ইউনূস ভাষণে একটি ঐক্যবদ্ধ স্থিতিশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই কাজে তার আন্তরিকতাও ভাষণে প্রতিফলিত হয়েছে। রাজনৈতিক দল, লড়াকু ছাত্র-জনতাসহ সব পক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করলে আশা করা যায় নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হতে পারে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement