২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জলবায়ু সম্মেলন কার্যত অসফল

-


বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসঙ্ঘের সর্বশেষ সম্মেলন (কপ-২৯) সদ্য শেষ হয়েছে। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত এবারের সম্মেলন কার্যত অসফল হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্মেলনের উদ্দেশ্যের সাথে এ আলোচনার এখন আর সামঞ্জস্য নেই। খোদ জাতিসঙ্ঘের একজন প্রাক্তন মহাসচিব, একজন সাবেক জলবায়ু প্রধানসহ অন্য অনেক বিশেষজ্ঞ এমনটি মনে করেন। তারা জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছে চিঠি লিখে এ কথা বলেছেন।
স্মরণযোগ্য যে, কপ সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এসেছিল ২০১৫ সালে প্যারিসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে আনতে অংশীজনরা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার রূপরেখা গ্রহণ করেন, যাতে বিশ্বের দেশগুলো চলতি শতাব্দীর মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি দেড় (১ দশমিক ৫) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখার চেষ্টা করবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিনগুণ বাড়াবে। গত বছর দুবাই সম্মেলনেও দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে সম্মত হয়। কোনো লক্ষ্য অর্জিত হয়নি; বরং দুবাই সম্মতির এক বছর পর গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে। অথচ বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, শতাব্দীর শেষ নাগাদ কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বর্তমান মাত্রার চেয়ে ৪২ শতাংশ কমাতে হবে।

জলবায়ু পরিস্থিতির ক্রমাবনতি কোনো বিশেষ দেশে বা অঞ্চলে ঘটছে না। ক্ষতির শিকার কমবেশি সারাবিশ্ব। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় হুমকিতে পড়া দেশ এবং ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলে ওঠার সামর্থ্যহীন দেশগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, মৃত্যু, ধ্বংস সারাবিশ্বে অহরহ ঘটছে। এগুলো রোধের একটিই উপায়, পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস থেকে বিরত থাকা। কিন্তু বিশ্ব নেতারা কোনোটি করতে পারছেন না। জলবায়ু সম্মেলনের অর্জনগুলোর বাস্তবায়ন শুধু মন্থর নয়, এখন তা নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। কারণ এবারের সম্মেলনের আয়োজক দেশ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে কথা বলেছেন।

পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে হলে বিশ্ব নেতাদের সমঝোতায় পৌঁছানোর বিকল্প নেই। কিন্তু সেটি কঠিনতর হবে এটি নিশ্চিত। সম্প্রতি জলবায়ু ইস্যুর ঘোর বিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলন থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ।
এমনই এক পরিস্থিতিতে জলবায়ু ইস্যুতে নতুন চিন্তাভাবনার দরকার আছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সে কথা বলেছেন। বাকু সম্মেলনে ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আমরা মানুষেরাই এ গ্রহের ধ্বংসের কারণ। আমরা এমন এক জীবনধারা বেছে নিয়েছি, যা পরিবেশের বিরুদ্ধে। বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসাত্মক’। তিনি জলবায়ু বিপর্যয় থেকে পৃথিবী বাঁচাতে শূন্য বর্জ্য এবং শূন্য কার্বনের ভিত্তিতে এমন এক নতুন জীবনধারা তৈরির আহ্বান জানান, যা হবে ‘গ্রহের নিরাপত্তা ও এর সব বাসিন্দার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা। আর এটি বাস্তবায়ন করবে তরুণ প্রজন্ম।’
জীবজগৎ ও প্রকৃতির মধ্যে সঙ্গতি রক্ষা করাই হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনধারা, যা প্রতিপালনই হতে পারে আগামী পৃথিবীর জীয়নকাঠি।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement