জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপস নেই
- ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জাতি গঠনের মুখ্য উপাদান শিক্ষা। এ জন্যই সব জাতি সবার ওপরে শিক্ষার গুরুত্ব দেয়। পাঠ্যপুস্তক হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের বাহন। এর মাধ্যমে মানবশিশুকে উন্নতমানের বিশ্বনাগরিক হওয়ার দীক্ষা দেয়া যায়। স্বাধীনতার পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য দেশে প্রণীত পাঠ্যপুস্তক খুব উচ্চমানের না হলেও চলনসই ছিল। অন্ততপক্ষে তাতে সুনাগরিক হওয়ার প্রেরণা পাওয়া যেত। পতিত হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর পাঠ্যপুস্তককে তাদের পারিবারিক ও দলীয় প্রচারণার হাতিয়ার বানায়। এতে করে সততা ন্যায়পরায়ণতা ও অপরের প্রতি দায়িত্ব পালনের যে নৈতিক শিক্ষা তা হারিয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে এর কুফল জাতি ভোগ করতে শুরু করে। এই অসুস্থ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে পাঠ্যপুস্তকে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।
গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী জাতীয় শিক্ষা নিয়ে বিপুল উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। পাঠ্যপুস্তককে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে অন্তর্বর্তী সরকার উৎসাহ জোগাচ্ছে। শিক্ষানুরাগী ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তাবনা পেশ করা হচ্ছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, জাতীয় জীবনে আমাদের আকাক্সক্ষাগুলো কী, জাতি হিসেবে এ অঞ্চলে টিকে থাকার জন্য আমাদের মৌলিক স্বার্থের বিষয়গুলো কী। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল ও মানবিক সমাজ ও জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য আমাদের কী কী প্রয়োজন। এসব চাহিদা পূরণে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের প্রায় সব বই নতুন করে লিখতে হবে। ভাষা-সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও ধর্ম বই সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে। এসব বইকে দলীয় ও পারিবারিক লিফলেট বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য রচিত গল্প-কবিতায় দেখা গেছে, আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির প্রভাব ও অযৌক্তিকভাবে বিশেষ ধর্মের প্রতি দুর্বলতা প্রদর্শন। পাঠ্যপুস্তকে কৌশলে এ ধরনের আধেয় প্রবেশ করিয়ে তারা নিজেদের মতো করে জাতীয় মানস তৈরি করতে চেয়েছিল। ছাত্রদের প্রাথমিক ভিত গঠনে গণিত, বিজ্ঞান ও ভাষাসংক্রান্ত বইগুলো যথেষ্ট উপযুক্ত ছিল না। যেন নিশানা বানিয়ে বাংলাদেশী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অদক্ষ দুর্বল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার একটি লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল পাঠ্যপুস্তক রচনায়। সব দেশেই মৌলিক শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে এগুলোতে সবচেয়ে জোর দেয়া হয়।
পাঠ্যপুস্তক রচনায় সীমাহীন গাফিলতিও দেখা গেছে। এগুলোতে ভাষার দুর্বল গাঁথুনি, বানান ভুল ও মুদ্রণপ্রমাদের ছড়াছড়ি দেখা যেত। এমনও ঘটেছে, ইসলাম শিক্ষার বইতে ছাপিয়ে দেয়া হয়েছে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি। বই ছাপানো নিয়ে আরেকটি বিষয় লক্ষ করা গেল, অবৈধভাবে অর্থ নয়ছয় করার হিড়িক। এর সাথে ছিল পাশের দেশকে খুশি করার মহড়াও। কোটি কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপানো নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়। তাদের বাইরে কেউ ছাপার আদেশ পেত না। আবার ভারতের প্রকাশনা সংস্থার কার্যাদেশ পাওয়াও নিশ্চিত করা হতো। মোট কথা, বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনার বিষয়টি চূড়ান্ত হঠকারিতা বানিয়ে ফেলা হয়েছিল।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইতে পারিবারিক ও দলীয় প্রচার চালিয়ে হাসিনা কোনো লাভ পায়নি। তার লিখিত ইতিহাস কেউ বিশ্বাস করেনি। এসব বই পড়–য়ারা হাসিনাকে উৎখাত করে তা প্রমাণ করেছে। সুতরাং নতুন করে আমরা যে পাঠ্যপুস্তক রচনা করব সেটি যেন নির্মোহ হয়। জাতি যেন সঠিক শিক্ষা পায়, সেটিকে পাঠ্যপুস্তক রচনার মূল লক্ষ্য বানাতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা