২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন

সর্বত্র জনপ্রত্যাশা প্রতিফলিত হোক

-

দেখতে দেখতে ১০০ দিন পার করল অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ফ্যাসিবাদের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সাড়ে ১৫ বছর ধরে দেশের মানুষ মুক্ত-স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন এতটা জেঁকে বসেছিল যে, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সে দুঃশাসনের অবসানে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিল। অবশেষে রক্তপিচ্ছিল পথ মাড়িয়ে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের অবসান হয়েছে। ৮ আগস্ট গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী গঠিত সরকারের প্রধান কাজ ছিল দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা। সরকার ওই জায়গায় মনোযোগ দিলেও পুরোপুরি সফলতা আসেনি। সন্দেহ নেই, এটির অন্যতম কারণ বিপ্লব-উত্তর পুলিশ বাহিনীর পলায়ন। শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে এমনভাবে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে, এ থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। যদিও আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছে; তাতেও স্বস্তি মিলছে না। সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আরো কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
গণহত্যার দায়ে বিভিন্ন জনের নামে বাছবিচারহীন মামলা দেয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। মামলার ক্ষেত্রে কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। এসব মামলা করে সরকারকে কেউ বিব্রত করতে চাচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।
দেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। পতিত স্বৈরাচারের আমলে সীমাহীন লুটপাটে অর্থনীতির অবস্থা ছিল করুণ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে অর্থনীতির সে অবস্থার অবসানে সঙ্কল্পবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। ইতোমধ্যে অস্থির ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। গতি এসেছে প্রবাসী আয়ে। রফতানি ছন্দ ফিরে পাচ্ছে। এ ছাড়া পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকারের কর্মকাণ্ড বেশ ইতিবাচক। কিন্তু আমদানি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও আয়বৈষম্যের বিষয়গুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে দেশের অর্থনীতির জন্য চারটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি, বহিস্থ খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। সরকারকে অর্থনীতির এসব চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে।
ছাত্র-জনতার অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদ পতনের মূল লক্ষ্য ছিল ভবিষ্যতে এমন একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের যেখানে আর কখনো স্বৈরাচার জেঁকে বসবে না। রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল পরিবর্তন চেয়েছেন মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা। অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার সেই চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে সংবিধান সংস্কারসহ রাষ্ট্র্র সংস্কারে গঠন করেছে কয়েকটি সংস্কার কমিশন। আশা করা যায়, এসব কমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে।
ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ এ সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, অন্তর্র্বর্তী সরকার হোঁচট খেলে বাংলাদেশ ফের স্বৈরাচারী অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। অথবা সামরিক শাসনের দিকে যেতে পারে।
আমাদের চাওয়া, ছাত্র-জনতার সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থ কিংবা হোঁচট খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারকে সর্বক্ষেত্রে জনপ্রত্যাশার গুরুত্ব দিতে হবে। জনপ্রত্যাশা পাশ কাটিয়ে ব্যক্তি কিংবা অঞ্চলকেন্দ্রিক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে আত্মঘাতী। সে ক্ষেত্রে জনঅসন্তোষ বাড়বে। অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্যপানে পৌঁছে দেশকে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিরে দেবে- এমনটি সবার চাওয়া।


আরো সংবাদ



premium cement