২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশবিরোধী প্রচার

প্রয়োজন কার্যকর প্রতিবাদ

-

ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে দেশবাসীর ওপর গুম, খুন ও চরম পীড়ন চালান পতিত শেখ হাসিনা। তার শাসনামলের দীর্ঘ সময়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা ঢাকার সাথে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধির সাফাই গেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দাবি ছিল, এ সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ আন্তরিক পর্যায়ে গেছে। এটিকে তিনি প্রতিবেশী সম্পর্কের বৈশ্বিক অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবেও উল্লেখ করেন। গণতন্ত্রহরণ ও মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্ব যখন শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে; তখন দিল্লি শেখ হাসিনাকে রক্ষায় কূটনৈতিক প্রয়াস চালায়। ভারতের সমর্থন পেয়ে দেশের মানুষের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনা তার শাসন দীর্ঘায়িত করেন।
ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এতে দেশের মানুষ নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পায়। গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানায়। দুর্ভাগ্য হলো- ভারত আমাদের এ অভ্যুত্থানকে সমর্থন জানায়নি। উল্টো এক ধরনের বৈরিতা দেখিয়ে যাচ্ছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারকে সহজভাবে নিতে পারেনি দিল্লি। এমনকি দেশটির এক শ্রেণীর মিডিয়া শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে শেখ হাসিনা শুরু থেকে নতুন সরকারকে বিষোদ্গার করছেন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অব্যাহতভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্য দিকে ভারতের মিডিয়া একইতালে ভিত্তিহীন খবর প্রচার করছে। দেশটির কিছু মিডিয়া শুরু থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুয়া খবর দেয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে এখনো উসকানি দিচ্ছে। আশার কথা হলো- এ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ভারতীয় গণমাধ্যমের উসকানিতে পা দিচ্ছেন না। এর পরও নতুন নতুন আক্রমণাত্মক খবর প্রচার থামছে না।
সর্বশেষ কলকাতার রিপাবলিক টিভি চট্টগ্রামকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে খবর প্রচার করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ করে নেয়া হলে ভালো হবে। কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো শক্তি চট্টগ্রামকে দখল করতে পারবে না। এ ধরনের খবর প্রচার অগ্রহণযোগ্য এবং অমার্জনীয়। যা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর। বাংলাদেশকে হেয় করে ভারতীয় মিডিয়ার খবর প্রচারে ঢাকার পক্ষ থেকে উপযুক্ত জবাব দেয়া হচ্ছে না। ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় বিষয়েও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একরকম চুপ।
ভারতীয় গণমাধ্যমের গায়ে পড়ে শত্রুতার পর কোনো প্রতিবাদ না জানানো দুঃখজনক। মনে রাখা দরকার, ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশের রয়েছে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। আমাদের দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সক্ষম। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত শেখ হাসিনার ভারতে থাকা নিয়ে দিল্লির সাথে কথা বলা। ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির বিষয়টি দিল্লির দৃষ্টিতে আনা। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এ নিয়ে সেভাবে প্রতিবাদ হতে দেখা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের বিষয় নিয়ে শুধু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
ভারতীয় মিডিয়ার এমন বৈরিতা নিয়ে দেশে ঐকমত্য দরকার। প্রয়োজন সবদিক থেকে প্রতিবাদ জানানো। যাতে ভারত সরকার সে দেশের মিডিয়ায় বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়।


আরো সংবাদ



premium cement