১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ওষুধের খরচে নিঃস্ব হচ্ছেন রোগী

আগ্রাসী বিপণন দায়ী

-

নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য, সেই সাথে ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে কোনো কোনো ওষুধের দাম হঠাৎ করে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে তীব্র চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনবেন, নাকি নিত্যপণ্য, তা নিয়ে সীমিত আয়ের মানুষ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। অবস্থা এত নাজুক যে, বিআইডিএসের তথ্য মতে- দেশে কোনো রোগীর চিকিৎসায় মোট চিকিৎসা ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি হয় ওষুধের পেছনে। আসলে ওষুধ বিপণন ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন না আনায় ওষুধের খরচে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণার (বিআইডিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশের ৬১ লাখ মানুষ প্রতি বছর দারিদ্র্যসীমার নিচে নামছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধের পেছনে। বিশেষ করে ক্যান্সার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনি চিকিৎসায় সর্বস্বান্ত হচ্ছেন মানুষ।
‘বাংলাদেশে বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য ব্যয়ের ধাক্কা ও দারিদ্র্য : ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য’ গত জুলাইয়ে উপস্থাপন করে বিআইডিএস। এতে বলা হয়, দেশের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন। অর্থাৎ তখন দেশে যত দরিদ্র মানুষ ছিলেন, তার মধ্যে ২০ শতাংশ দরিদ্র হয়েছেন স্বাস্থ্যগত কারণে। এর প্রধান কারণ চিকিৎসা বাবদ মানুষের ব্যয় বেড়ে যাওয়া। ২০২০ সালে এ ব্যয় ছিল ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে তা ৭৩ শতাংশে উঠে আসে। তিন বছর পর এখন এই ব্যয় যে আরো বেড়েছে, তা সহজে অনুমেয়।
গ্লোবাল হেলথ এক্সপেনডিচার ডেটাবেজের তথ্য হলো- বাংলাদেশে ব্যক্তি মানুষের চিকিৎসা বাবদ যত ব্যয় হয়, এর ৭৩ শতাংশ ব্যক্তিকে নিজের পকেট থেকে বহন করতে হয়। অর্থাৎ সরকার বহন করছে মাত্র ২৭ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে শুধু আফগানিস্তানে এই ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন রোগীকে চিকিৎসা নিতে নিজের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয় ৬৮ দশমিক ৫০ ভাগ টাকা। আবার এর মধ্যে রোগীকে সবচেয়ে বেশি ৬৪ ভাগ টাকা ব্যয় করতে হয় ওষুধ খাতে। নিজ পকেট থেকে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ১৬ দশমিক ৪ ভাগ রোগী প্রয়োজন থাকলেও চিকিৎসা নিতে পারেন না।
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদদের মতে, ওষুধের খরচ কয়েকটি কারণে বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে, দেশের মানুষের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ কিনতে পারা। অপ্রয়োজনে ওষুধ খাওয়া। পল্লী চিকিৎসকদের ইচ্ছামতো ওষুধ দেয়া এবং অসাধু চিকিৎসকের অতিরিক্ত ওষুধ দেয়া। এ জন্য দায়ী কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন।
দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওষুধ উৎপাদন হয়। এ জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ‘পুশ সেল’ করে থাকে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাহিদা নির্ণয় করে সে অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন করতে হবে। প্রেসক্রিপশন অডিট চালু করতে হবে। এতে ওষুধ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন বন্ধ হতে পারে। এতে ওষুধের দাম কমবে বলে আশা করা যায়। সেই সাথে ওষুধ সেবনের পরিমাণ এবং দাম যৌক্তিক হলে চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে। তবে স্বাস্থ্যবীমা ছাড়া চিকিৎসাব্যয় কমানো বাস্তবে খুব কঠিন কাজ।


আরো সংবাদ



premium cement