২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

জনস্বাস্থ্যের নতুন হুমকি

-

ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগে সাধারণত প্রাপ্তবয়স্করা আক্রান্ত হন বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু সম্প্রতি শিশুরা উদ্বেগজনক হারে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সহযোগী একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাইপ-১ ডায়াবেটিসের পাশাপাশি আজকাল বহু শিশু টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি মূলত হয় অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও কায়িক শ্রমে অনীহার কারণে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আজ থেকে আট বছর আগে ২০১৬ সালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের শিশুর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ শতাংশে। দীর্ঘ আট বছর পরে এখন এ সংখ্যা নিশ্চয় আরো অনেক বেড়েছে। এর প্রমাণ, বর্তমানে দেশে প্রায় দুই লাখ ডায়াবেটিসের রোগী, যাদের বয়স ১৬ বছরের নিচে।
যেসব শিশু ফাস্টফুডে বেশি অভ্যস্ত, দিন দিন মুটিয়ে যাচ্ছে, কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস যাদের খেলাধুলার একমাত্র উপকরণ তারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনেক আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। দেশে এ ধরনের ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
লক্ষণীয়, কয়েক দশক আগেও আমাদের দেশে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হতো না বললেই চলে। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, শিশুদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। চিকিৎসকদের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের শরীরে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেশি ক্ষতি করে। আক্রান্ত শিশুদের ভবিষ্যতে হৃদরোগ এবং কিডনি রোগে ভোগার হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া অল্প বয়সে দৃষ্টিহীনতার ঝুঁকিও রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বর্তমানে উদ্বেগজনক হারে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা? এর জন্য মূলত দায়ী অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। যেমন- শিশুদের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ; বিশেষ করে জাঙ্ক ফুড খাওয়া আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে যাওয়া, প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি ঘুম এবং ঘরের বাইরে খেলাধুলা না করায় অর্থাৎ শরীর চর্চার অভাবে শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেকটা বেড়েছে। এতে দেশের জনস্বাস্থ্য নতুন আরেকটি হুমকিতে পড়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। সুতরাং শিশুদের ডায়াবেটিসমুক্ত রাখতে অভিভাবকদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ওজন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিলে, ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। দ্রুত ওজন কমাতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি। যদি দেখা যায়, ইতোমধ্যে শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের শরীরচর্চা থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কঠোর শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে হবে। কারণ, নিত্যদিনের জীবনধারায় পরিবর্তন ঘটিয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ঠেকানো সম্ভব। এমনকি উপসর্গও বদলে ফেলা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ডায়াবেটিস মানুষের শরীরের জন্য নীরব ঘাতক। আক্রান্তদের নানাবিধ শারীরিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। তবে নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন এই হুমকি মোকাবেলায় অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি প্রচারমাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর তৈরি খাবারের বিজ্ঞাপনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে। একই সাথে শিশুখাবারে চিনি এবং চর্বির পরিমাণ কমানো জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement