১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ক্ষতিকর গাছ লাগানো বন্ধ হচ্ছে

একটি শুভ উদ্যোগ

-

বন বিভাগ আর ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ রোপণ করবে না। পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা এমনই নির্দেশ দিয়েছেন। বিদেশ থেকে আনা দু’টি গাছই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর বলে দাবি করেন অনেকে। এসব গাছ বহুদিন ধরেই গবেষক ও উদ্ভিদবিদদের উদ্বেগের কারণ। তারা মনে করেন, এসব গাছ বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অপরিসীম ক্ষতি করেছে।
বহু বছর পরে হলেও এই দু’টি গাছ লাগানো বন্ধ করা একটি শুভ উদ্যোগ। কিন্তু এরই মধ্যে বন বিভাগের মাধ্যমে দু’টি গাছ প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বনায়নের জন্য ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ লাগিয়েছেন, অনেকে বাড়িঘরের আশপাশে এবং বাড়ির ভিটায় এসব বিদেশী গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থকরী সুবিধা পাওয়ার আশা করেছেন। কিন্তু এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং আমাদের দেশীয় গাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এক সাক্ষাৎকারে সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, মূলত বিদেশী প্রজাতি, যেমন- রেইনট্রি, সেগুন, আকাশমণি, আকাশিয়া, শিশু, বাবলা ও ইউক্যালিপটাস জাতীয় গাছের জন্য প্রচুর জায়গার দরকার হয় এবং এগুলো দেশী গাছের তুলনায় অনেক দ্রুততার সাথে বেশি পরিমাণে পুষ্টি মাটি থেকে শুষে নেয়।
তিনি বলেন, এসব গাছ প্রচুর পানি শোষণ করে। এরা আশপাশের অন্য প্রজাতির গাছকে বাঁচতে দেয় না বলে দেশীয় প্রজাতিগুলো বিরল হয়ে গেছে। এভাবেই নষ্ট হয়েছে জৈববৈচিত্র্যের ভারসাম্য।
এখন বিদেশী গাছের বিষয়ে সরকারের সতর্কতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সড়কের পাশে সামাজিক বনায়নের জন্য লাগানো ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি ছাড়া অন্য গাছ সংরক্ষণ করতে বন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর অর্থ হলো- উল্লিখিত দু’টি গাছ কেটে ফেলা হবে।
উপদেষ্টা বিভিন্ন বনাঞ্চলের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং এসব বনভূমিতে ইকো-ট্যুরিজম ও পিকনিক বন্ধ করার কথা বলেছেন। পরিবেশের জন্য এসব পদক্ষেপই শুভ হবে যদি তা কার্যকরভাবে করা সম্ভব হয়।
তবে পরিবেশ রক্ষার নামে জবরদস্তি কাম্য নয়। সেন্টমার্টিনে পর্যটন সীমিত করা জরুরি ছিল। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসছে। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা বিষয়টিকে এমনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে, যেন দ্বীপটি কারো হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।
আমরা আশা করব, দেশজ প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার দেশে কোনো বিদেশী উদ্ভিদ ও প্রাণীর অনুপ্রবেশ রোধের আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির মতো অনেক গাছ বিদেশ থেকে এসেছে। সব গাছ ক্ষতিকর নয়। রিফুজিলতা, স্বর্ণলতা, মটমটিয়া, পিসাইস, পার্থেনিয়াম, কচুরিপানার মতো বেশ কিছু লতা ও গুল্ম দেশে ঢুকে পড়েছে। এগুলো আমদানির অনুমতি কেউ দেয়নি। স্বর্ণলতা দেশীয় কোনো গাছকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে গাছটিকে মেরে ফেলে। কচুরিপানা যে কী অনাহুত সঙ্কটের সৃষ্টি করে সেটি সবারই জানা। এ ধরনের কোনো ক্ষতিকর উদ্ভিদের আগমন অবশ্যই রোধ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement