২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
প্রবাসে গমনেচ্ছুদের শোষণ

অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর হোন

-

জনশক্তি রফতানি দেশের অর্থনীতির দ্বিতীয় প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ দ্রুত পতনের মুখে শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ বড় ভরসা হয়ে উঠছে। ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর পুরো অর্থব্যবস্থা যখন নেতিবাচক ধারায় তখন প্রবাসীরা বিপুল অর্থ পাঠিয়ে পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়তা করছেন। প্রবাসী আয় ইতোমধ্যে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- যারা আমাদের দুঃসময়ে বাঁচাচ্ছেন আমরা তাদের উপকার দূরে থাক, সুযোগ বুঝে শোষণ করছি। এ সরকারের আমলেও তারা পুরোপুরি বঞ্চনামুক্ত হতে পারছেন না।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোতে বিদেশে গমনেচ্ছুদের ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হতে হচ্ছে। ইতালি-হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের কিছু দেশে যেতে গিয়ে তাদের বিপুল অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশ-গমনেচ্ছুদের সহজে বহির্গমন ছাড়পত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা। বাস্তবে ক্ষেত্রবিশেষে ঘটছে উল্টোটি। কৌশলে তাদের ওপর ঘুষ-বাণিজ্য ও বিভিন্ন হয়রানি করা হচ্ছে। মূলত মাফিয়া সরকারের সময় যারা সিন্ডিকেট করে অবৈধভাবে শ্রমিকদের লুটেছে তাদের একটি অংশ পেছন দিক থেকে এখনো সক্রিয় রয়েছে। এরা অফিসের বাইরে বসে এই অপতৎপরতা চালাচ্ছে। ছাড়পত্র দেয়ার নামে তারা ভিসা-প্রতি সরকার নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। প্রতিবেদক সরেজমিন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, তারা অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছেন। একজনকে পেয়েছেন, তিনি হাঙ্গেরি যাওয়ার জন্য ১৬ লাখ টাকা দিচ্ছেন। অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এই দুর্নীতির সাথে জড়িত। প্রবাসে যেতে ইচ্ছুক তরুণদের কাছ থেকে তারা লাখ লাখ টাকা কোনো ধরনের উপযুক্ত কারণ ছাড়া তুলে নিচ্ছেন। রিক্রুটিং এজেন্সি এর একটি অংশ খরচ করে সরকারি কর্মকর্তাদের পেছনে। এ ছাড়া একশ্রেণীর দালালও এদের সাথে যুক্ত হয়। কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি অংশ বিগত সরকারের আমলে বিদেশে গমনেচ্ছু তরুণদের অসহায় করে অর্থ কামাই করেছে। এ চক্রের একটি অংশ এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে; সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এখনো একই কাজ করে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচারের আমলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট করে বিদেশ গমনেচ্ছুদের শোষণ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি যাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব ছিল তারা এটি করেছেন। কয়েকজন সংসদ সদস্য মিলে মালায়েশিয়াগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রামাণিক অপরাধ থাকার পরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও তা এখনো সন্তোষজনক নয়।
জনশক্তি রফতানি করে কোনো দেশ টেকসই উন্নতি করতে পারে না। আমরাও বিগত তিন যুগ প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভর করে চলছি; কিন্তু অর্থনীতির ভিত নড়বড়ে। তবে এ খাতকেও আমরা স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারছি না। প্রবাসী আয় লাইফলাইন হয়ে উঠলেও শ্রমিকদের আমরা কোনো মূল্য দিইনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বচ্ছতার সাথে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement