১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সিন্ডিকেটসহ নানা অনিয়ম

প্রদীপের নিচে অন্ধকার

-

রাজধানীর উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগে অর্থের বিনিময়ে সিজার করা, বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী পাঠানো, চাকরিতে অনিয়মিত, বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয়, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য, সিট পেতে ঘুষ-বাণিজ্য, রোগীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশনসহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুগতে হচ্ছে রোগীদের। নয়া দিগন্তের কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গাইনি শাখায় গর্ভবতী মায়েদের সিজার করা নিয়ে অনিয়ম হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। টাকা নিয়ে সিজার করানো হয়। এ জন্য সিন্ডিকেট রয়েছে, যার সদস্যরা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের দালাল। তারা হাসপাতালে আসা রোগীদের কূটকৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার করতে আসা গর্ভবতী মা ও তার স্বজনদের নানা অসুবিধার কথা বলে কেরানীগঞ্জের আটিবাজার, খোলামোড়া, রোহিতপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এতে তারা সেসব ক্লিনিক থেকে কমিশন পায়।
উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকার গর্ভবতী স্মৃতি আক্তার জানান, তাকে গত ২৪ অক্টোবর কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালট্যান্ট ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হওয়ার পর তিন হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে সিজার করানো হয়। এরপর পাঁচ-ছয় হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে। সরকারি হাসপাতালে কেন টাকা দিয়ে সিজার করাতে হবে জানতে চাইলে তাদের বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে সিজার করানো যায় না। করালে টাকা দিতে হয়। তার অপারেশন স্থলে ইনফেকশন দেখা দিলে অন্যত্র চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান।
এর আগে গত ৮ আগস্ট নাদিয়া নামে এক গর্ভবতীকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে হাসপাতালে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সিজার করেন ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীন। সিজার করাতে নাদিয়াকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানান তিনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) হিসেবে ডাক্তার ও তার আগে অ্যানেসথেসিয়ার ডা: ইমরান যোগদান করেন। এখানে এসে তারা দালালদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এর আগে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ছেলে তানভীর আহমেদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর ডা: আফরোজ ও ডা: ইমরানের দাপট আরো বেড়ে যায়। গাইনি শাখা এই দু’জনের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে।
অভিযোগ রয়েছে, গর্ভবতী মায়েরা সিজারের জন্য কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সিজার না করিয়ে তাদের আশপাশের ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীন বলেন, এ হাসপাতালে আসা রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তানভীর আহমেদ জানান, তার কাছে গাইনি ডা: রাশেদা আফরোজ পারভীনের বিরুদ্ধে কোনো রোগী অভিযোগ করেননি। গত মাসে ১৩৬টি ডেলিভারি হয়েছে, যা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি। ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতালে সিজারের জন্য কোনো বাঁধাধরা সময় নির্ধারণ করে দেয়া নেই। রোগী ২৪ ঘণ্টা সেবা পাবেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকলে ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। সে টাকাটা হাসপাতাল সমাজসেবার মাধ্যমে রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে পরিশোধ করা হয়। এর বাইরে কোনো অনিয়ম হলে তা বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেরানীগঞ্জ এখন বৃহত্তর রাজধানীর অংশ। এখানে সরকারি হাসপাতালে অনিয়ম হওয়া অত্যন্ত মারাত্মক ব্যাপার। প্রদীপের নিচে অন্ধকার- এ কথাটি মনে পড়ে। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে কেরানীগঞ্জ হাসপাতালের অনিয়ম দূর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement