০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মুজিববর্ষ পালনের নামে লুটপাট

দোষীদের বিচারের আওতায় আনুন

-

শেখ মুজিবকে পতিত সরকার নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছে। যত অন্যায় অনিয়ম দুর্নীতি- সব কিছুকে মুজিববন্দনা দিয়ে জায়েজের অপচেষ্টা হয়েছে। গুম, খুন, সংবিধান লঙ্ঘন, ব্যাংক লুট ও অমানবিকতা আড়াল করতে মুজিবের মূর্তিকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। একই কারণে সরকারি উদ্যোগে ঢাকঢোল বাজিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপন করা হয়। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ হাতিয়ে নেয়া। সারা দেশে এ উপলক্ষে বেপরোয়া চাঁদাবাজিও করা হয়। হাসিনার ক্ষমতাচক্র এবং আশীর্বাদপুষ্টরা এ বর্ষকে উপলক্ষ বানিয়ে দু’হাতে কামিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংঘটিত দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্য খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে ।
ফ্যাসিবাদী সরকার জাতির ঘাড়ে মুজিববর্ষ নামের অপচয়ের ঘানি এমন সময় চাপায় যখন দেশের অর্থনীতি চরম দুর্দশাগ্রস্ত। ব্যাংকগুলো শূন্য, সরকারি তহবিল ফোকলা আর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা চরমে। পরিণামের কথা না ভেবে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিদেশ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেয়া হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ রফতানি ব্যয় মেটানোর ঝুঁকিতে পড়েছিল। আশঙ্কা হচ্ছিল পুরো অর্থব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। শেখ হাসিনা এসব থোড়াই কেয়ার করে ব্যয়বহুল এ আয়োজন করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, আমরা যেখানে আইএমএফের কাছে হাত পাতছি সঙ্কট মোকাবেলায় ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের, সেখানে মুজিববর্ষের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট করা হয়েছে। এ উপলক্ষে যেখানে সেখানে মুজিবের মূর্তি ও ম্যুরাল বসানো হয়েছে। ১০ হাজার মূর্তি বানানোর জন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অসংখ্য মুজিব কর্নার তৈরি করা হয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে মুজিববন্দনার এ কাজ খুব সামান্য ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় মানুষ করেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী সরকারের ভয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে মুজিববর্ষের নামে মূর্তি বানানোর কাজে জবরদস্তি করা হয়েছে। এ জন্য বাজেট করে সরকারি কোষাগার লুটপাট করা হয়েছে।
এক টাকার কাজ দেখানে হয়েছে ১০ টাকা। বাড়তি অর্থ মাফিয়াচক্র ভাগ-বাটোয়ারা করেছে। কাগজে-কলমে এর হিসাব পাওয়া যেতে পারে। তবে এ উপলক্ষে বিভিন্ন কোম্পানি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও অর্থ দিতে বাধ্য করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বড় কোম্পানিগুলোর সামাজিক খাতে ব্যয়ের বাজেট প্রায় পুরোটা এই মাফিয়াচক্র কেড়ে নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বাড়তি অর্থ দিতে বাধ্য করা হয়। এগুলোর যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। বেপরোয়া চাঁদাবাজির শিকার ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এসবের বিস্তারিত প্রকাশ করতে পারে।
মুজিববন্দনার নামে জাতির ওপর কৃত নানা অন্যায়-অনিয়মের তদন্ত সময়ের দাবি। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি শ্রেণী এসব নিয়ে অতি উৎসাহ দেখিয়েছেন। তাদের শনাক্ত করতে হবে। উৎসাহদাতা এবং লুটপাটকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা সর্বাধিক গুরুত্ব পেতে হবে। তাদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।


আরো সংবাদ



premium cement