মুনাফা নিশ্চিত করুন
- ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
একটি জাতীয় দৈনিকের তেঁতুলিয়া সংবাদদাতা জানান, চলতি বছরের মার্চ-মে, এই তিন মাসের খরার বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের চা বাগানগুলো। এবার অনাবৃষ্টি ও তাপদাহের দরুন অধিকাংশ চা বাগানের কাঁচা পাতার মান ভালো না হওয়ায় ক্ষুদ্র চা বাগানিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। বর্তমানে পঞ্চগড়ে ক্ষুদ্র চাষিদের পাশাপাশি বড় চা বাগান মালিকরাও লোকসানের মুখে পড়ে উৎপাদনশীল বাগানের গাছ উপড়ে ফেলছেন।
বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে ২১ বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয় ২০০০ সালে, যা শুরু করে দু’টি কোম্পানি। চা চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় ২০০১ সালের পর রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ক্ষুদ্রপর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। এ পাঁচ জেলায় ১২ লাখ ১০ হাজার ৬৬০ একর সমতল জমিতে চা বাগান রয়েছে।
জানা যায়, উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় ২৫ একরের বেশি জমিতে ১০টি নিবন্ধিত বড় ও ২১টি অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে। ২৫ একরের নিচে দুই হাজার ১৬৪টি ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত এক হাজার ৭৪৫। সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষ থেকে ২০২১ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১৪.৫৪ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এসব বাগান থেকে ২০২৩ সালে এক কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি কাঁচা চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। পঞ্চগড় চা বোর্ডের অধীন পাঁচটি জেলায় অনুমোদিত টি কারখানা রয়েছে ৫৮টি। এর মধ্যে উৎপাদনে আছে ২৮টি। সমতলে উৎপাদিত সবুজ কাঁচা চা পাতা থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে কারখানায় তৈরি চায়ের পরিমাণ প্রায় এক কোটি ছয় হাজার কেজি। বছরে ছয়টি রাউন্ডে বাগানের সবুজ কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি করা হয়। সাধারণত প্রথম রাউন্ডে বাগানে সবুজ কাঁচা চা পাতা তোলার পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে বাগানে দ্বিতীয় রাউন্ডের কাঁচা পাতা সংগ্রহ করা হয়। এ হিসাবে বছরে ছয়টি রাউন্ডে বাগানের সবুজ পাতা তোলেন চাষিরা। কিন্তু এই পাতা বিক্রির সময় প্রতিটি রাউন্ডে বাগান মালিকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কাঁচা পাতার নিম্নহারে দাম নির্ধারণ আর কর্তনের কারণে বাগানের পাতা বিক্রি ও কারখানায় সরবরাহের পর চাষিদের তেমন লাভ থাকে না। এমনকি এ বছর চাষিরা এই টাকা দিয়ে বাগান পরিচর্যার কাজও সম্পন্ন করতে পারেন না। উপরন্তু, চলতি মৌসুমে দীর্ঘ খরার কারণে বাগানে সেচ দিতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে। তাপদাহে পুড়ে মরে যাওয়া ছাড়াও বাগানের গাছগুলো লাল মাকড়সহ নানা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়। এ জন্য যে সার-কীটনাশক প্রয়োজন, তার দামও চড়া। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে প্রথম রাউন্ডে খসখসে শুকনা সবুজ পাতা তুলে কারখানায় সরবরাহ করার দরুন কারখানাগুলো প্রতি কেজি সবুজ কাঁচা পাতা প্রায় ১০-১৫ টাকা দরে কেনার পাশাপাশি ৪০-৫০% হারে কেটে নিয়ে চাষিদের মূল্য পরিশোধ করে। এতে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হন চাষিরা।
পঞ্চগড়ে কয়েক বছর ধরে সবুজ কাঁচা পাতার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আন্দোলনের পরও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অনেক ক্ষুদ্র চা চাষি উৎপাদনশীল বাগানের চাগাছ উপড়ে ফেলছেন। অনেক বাগানের মালিক চাগাছের পরিচর্যা করছেন না।
তেঁতুলিয়া উপজেলার একজন পুরনো চা চাষি জানান, ‘আমার বাগান রয়েছে প্রায় ৬০ একর জমিতে। ২০২২ সালে চা বাগান পরিচর্যা কাজে খরচ হয় প্রায় ২৩ লাখ টাকা; কিন্তু বাগান থেকে উৎপাদিত চা পাতা বিক্রি করেছি ১৯ লাখ টাকা। এই লোকসানের হাত থেকে বাঁচার জন্য ২০২৩ সালে প্রায় ছয় একর জমির চা বাগান উপড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই।’
এ বিষয়ে পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন, উৎপাদনের তুলনায় বাজারে চাহিদা কম থাকায় চা পাতার দাম কমেছে। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য চাষিদের ভালো মানের পাতা উৎপাদন করতে হবে। সর্বোপরি পঞ্চগড়ে চা শিল্পের মানোন্নয়ন ও সঙ্কট উত্তরণের জন্য চাষি ও কারখানা মালিকদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই চাচাষিরা চাইবেন লোকসান নয়, মুনাফা করতে। কিন্তু বর্তমানে চলমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুনাফা দূরের কথা, লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। এমনকি অনেকে এই লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতে চা বাগান উপড়ে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এতে দেশের চা শিল্পও ক্ষতির মুখে পড়ছে। এই দুরবস্থা মোকাবেলা তথা চাচাষিদের মুনাফা নিশ্চিতকরণের জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা