২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আলুর দাম নিয়ে কারসাজি

মানুষ স্বস্তি পাবে কিভাবে

-


নিত্যপণ্যের চড়া দামে গত তিন বছর ধরে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সেই অবস্থার এখনো তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এমনকি দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালীদের সিন্ডেকেট যেখানে নেই সেখানেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই। যেমন আলুর কথাই ধরা যেতে পারে। আলু প্রতিটি পরিবারের জন্যই অপরিহার্য। উৎপাদনও হয় চাহিদার চেয়ে বেশি। এর ফলনে কেজিপ্রতি কৃষকের ব্যয় হয় ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১২ টাকা। আলুর বিপণনে বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপের সিন্ডিকেটের জড়িত থাকার কোনো অভিযোগ নেই। তারপরও দেশে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৬০-৭৫ টাকায়। এ এক অবিশ্বাস্য পরিস্থিতি।
সম্প্রতি সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ উঠে এসেছে জয়পুরহাটের পরিপ্রেক্ষিতে। বলা হয়েছে, বছরের শুরুর দিকে ফেব্রুয়ারি-মার্চে মৌসুমের শুরুতে কৃষক আলু বিক্রি করেন প্রতি কেজি ১৪-১৫ টাকায়। গত জুনে হঠাৎ করে এর দামে অস্থিরতা দেখা দেয়। অক্টোবরের শেষে পাইকারিতে ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন খুচরাপর্যায়ে দাম ৬০-৬৫ টাকা। জাতভেদে কোনোটির কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। গত চার বছর ধরে এ ধারা চলে আসছে।
খবরে স্থানীয় বাস্তবতা উল্লেখ করে বলা হয়, আলুর বাজারে অস্থিরতার কারণ হিমাগার মালিকদের কারসাজি। তারা মৌসুমের শুরুতে কম দামে আলু কিনে মজুদ করেন এবং পরে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেন। একই প্রক্রিয়া সারা দেশে চলছে। শুধু আলু নয়, প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মজুদদারি ও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি। যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে অসাধু হিমাগার মালিক, মজুদদার ও আড়তদাররা বাজারে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি করে।

জানা যাচ্ছে, জয়পুরহাটে উৎপাদন ও মজুদ অনুযায়ী আলুর সঙ্কট নেই। হিমাগার মালিক ও মজুদদারদের ভাণ্ডারে যথেষ্ট পরিমাণে আলুর মজুদ আছে; কিন্তু আড়তদারও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
একজন আলু ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে বলেন, দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু সিন্ডিকেটই দায়ী। হিমাগার গেটে বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজারে নয়, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিলে বাজার স্বাভাবিক হতে বাধ্য।
বৃহত্তর বগুড়া কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল গফুর বলেন, এখনো হিমাগারে যে পরিমাণ আলু আছে, তাতে সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। সরকার থেকে তদারকি করা উচিত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ টাকা খরচ হয়। সেখানে কোল্ড স্টোরেজ ও পরিবহন খরচ বিবেচনায় নিলে প্রতি কেজিতে ব্যয় সর্বোচ্চ ২০ টাকা হতে পারে। অথচ বাজারে ক্রেতাদের আলু কিনতে হচ্ছে উচ্চমূল্যে।
দেশে আলুসহ যেসব পণ্যের ঘাটতি নেই সেগুলো ভোক্তাকে কেন অতিরিক্ত দামে কিনতে হবে; তার সব ব্যাখ্যাই অগ্রহণযোগ্য।
এতদিন স্বৈরাচারী সরকারের নজর ছিল সবকিছু থেকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের দিকে। সাধারণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার মন-মানসিকতা তাদের ছিল না। দেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তন আসায় এখন পরিস্থিতি পাল্টাতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।

 

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement