০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`
হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

হেগের আদালতকেও গুরুত্ব দিন

-

পতিত শেখ হাসিনার দানবীয় শাসনে বাংলদেশের মানুষ পর্যুদস্ত হয়েছেন। ক্ষমতা বলয়ের অংশ ছাড়া আর সবাই নির্যাতনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছেন। হাসিনা জমানায় রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্বৃত্তদের প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এ কারণে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে-বিদেশে বিপুল সমর্থন পাওয়ার পরও রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রবল বাধার মুখে পড়ছে। দুর্বৃত্তায়নকে পরাস্ত করতে হলে এর হোতা হাসিনার উপযুক্ত বিচার করতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, গুম খুন গুপ্ত কারাগার তৈরি করে রাষ্ট্রকে তছনছ করে দেয়ার পরও তিনি প্রতিবেশী দেশে সমাদরে আছেন। এ অবস্থায় তাকে বিচারের মুখোমুখি করা কষ্টসাধ্য হলেও জাতির প্রয়োজনে তা আমাদের করতে হবে।
বাংলদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এর মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে সে দেশে নিরাপদে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। হাসিনার বিষয়ে ভারতের যে মনোভাব, তাতে তাকে আমাদের স্থানীয় আদালতে সোপর্দ করবে না দিল্লি। আমাদের সাথে করা বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকলেও তার মর্যাদা রাখবে কি না সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, মামলার রায় হলে তাকে ভারতের কাছে চাওয়া হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষের ওপর চেপে বসা এই দানবের বিরুদ্ধে বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা আশা জাগাচ্ছে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
তিন ব্রিটিশ আইনজীবী এ আদালতে ১৮ অক্টোবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। মামলার আর্জিতে তারা শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে স্বাধীন তদন্ত এবং মূল সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ করেছেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নৃশংসভাবে এক হাজার ৪০০ জনকে হত্যা ও ২২ হাজার মানুষকে গুরুতর আহত করার কথা উল্লেখ করা হয়।
আন্তর্জাতিক আদালতে কেন তারা বিচার চাচ্ছেন তার যুক্তি তুলে ধরা হয়। তারা জানিয়েছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তারা বিগত হাসিনা সরকারের নিয়োগ করা। মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধ এ প্রশাসন দিয়ে হাসিনা চালিয়েছেন। এ জন্য তারা আশঙ্কা করছেন দেশের ভেতরে তার বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত নাও হতে পারে। এ ছাড়া এ ধরনের বিচারে বিচার প্রশাসনের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা হাসিনা ইচ্ছেমতো সাজিয়েছেন। উচ্চ আদলতে বিচারকদের বড় অংশ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা তৈরিতে হাসিনাকে সহায়তা করেছেন। তারা আরো আশঙ্কা করছেন, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে নিজেদের সুবিধায় ন্যায়বিচারের সাথে আপস করতে পারে। তাদের এ আশঙ্কা রাজনৈতিক দলগুলোর কথায় ইতোমধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। মূলত ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা এর সুযোগ নেয়া রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রথম পছন্দ। এর সাথে এমন একটি প্রতিবেশী দেশে হাসিনা আশ্রয় পেয়েছেন, যারা তাকে তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করে। আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার প্রভাব কাজে লাগিয়ে দিল্লি এই বিচার নস্যাৎ করে দিতে পারে।
হাসিনার নির্দেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশে অগুনতি মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ পাপের উপযুক্ত বিচার ছাড়া কোনোভাবে একটি গণতান্ত্রিক উদার রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে পারব না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দায়ের হওয়া মামলার পাশাপাশি হেগের আদালতে হওয়া মামলা নিয়েও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। যে করে হোক, হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement