০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১,
`
ঋণের নামে প্রতারক চক্র

তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিন

-


একটি সহযোগী দৈনিকের সখীপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, ঋণ দেয়ার নামে তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র সখীপুরে। কারা, কিভাবে ঋণ দেবে, সে বিষয়ে কিছুই জানেন না এলাকার সাধারণ মানুষ। কিছু না বুঝেই ঋণ পাওয়ার প্রলোভনে ব্যক্তিগত তথ্য চক্রের হাতে তুলে দিচ্ছেন তারা। সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি অব বাংলাদেশের প্রধান কর্মকর্তা আল হাসান মিলাদ জানান, এসব তথ্য ব্যবহার করে সাইবার জগতের অপরাধীরা যেকোনো সময় ফাঁসাতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি অপরিচিত সংগঠন থেকে এক লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে বলে গুঞ্জন ওঠে। তবে তাদের অফিস কিংবা ঠিকানা কী, সে ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত নন। এমন প্রলোভনে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ছুটে যাচ্ছেন উপজেলার বহুরিয়া গ্রামের মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে। সেখানে মনির, তার স্ত্রী এবং জাহাঙ্গীর নামে এক যুবক পূরণ করে নিচ্ছেন ঋণের ফরম। এক সপ্তাহ ধরে চলছে এ কার্যক্রম। স্থানীয়রা জানান, ঢাকার কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের নাম করে প্রতিজনকে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা করে ঋণ দেয়ার কথা জানান ওই মনির। এর পর থেকেই হাজার হাজার নারী-পুরুষ ওই বাড়িতে ছুটে আসছেন ফরম পূরণের জন্য।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাশের গ্রামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে লোক মারফত জেনেছি, এক লাখ টাকা করে ঋণ দেয়া হবে। এ জন্য মোবাইল নাম্বার ও ভোটার আইডির নাম্বার লাগবে। আমার গ্রামের অনেক নারী এসে ফরম পূরণ করে গেছেন।’ কবে, কারা কিভাবে এই টাকা দেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলতে পারেননি ওই নারী। ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া অন্তত ১০ জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধু বহুরিয়া ইউনিয়ন নয়, উপজেলার অনেক দূরের গ্রাম থেকেও মানুষ দলে দলে এসে বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার আশায় নিজেদের স্বাক্ষর এবং ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সরকার থেকে ব্যবসাবাণিজ্য ও কৃষিখামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এসব ঋণ দেয়া হচ্ছে বলে তাদের জানিয়েছেন। তারা আরো জানান, ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের আঞ্চলিক সংগঠক হিসেবে বেশ কিছু দিন ধরে তারা এ কাজ করছেন। গত দু’দিনে অন্তত এক হাজার মানুষের স্বাক্ষর, এনআইডি নাম্বার, মোবাইল নাম্বার, জন্মতারিখসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তারা।

কবে নাগদ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই চক্রের সংগঠক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এই টাকা পরিশোধের কোনো সময়সীমা নেই। কিছু দিন পরেই সবাইকে নিয়ে একটি মিটিং করব, সেখানে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে জানানো হবে।
এ সময় ওই চক্রের সদস্য মনির বলেন, ‘দেশের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ঋণ হিসাবে দেয়া হবে। আমাদের হেড অফিস মির্জাপুরের বাকলী মোড়ে। আমি এই এলাকার সংগঠকের দায়িত্বে আছি। ফরম পূরণ করা শেষ হলে আমরা কাগজপত্র হেড অফিসে পাঠিয়ে দেবো। সেখান থেকে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয়া হবে।’
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি অব বাংলাদেশের প্রধান কর্মকর্তা আল হাসান মিলাদ বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য এবং স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই ছাড়া কাউকে দেয়া উচিত নয়।’
অপরাধীরা যেকোনো সময় ফাঁসাতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সখীপুর থানার ওসি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সরকার রয়েছে তদন্ত এবং নীতিমালা তৈরি করার জন্য। অভিযোগ উঠলেই তা সত্য নয়, আগে সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। এরপর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারের। কর্তৃপক্ষকে তা করতে হবে। আমরা আশা করি, টাঙ্গাইলের ঘটনা তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement