২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান নির্ণয়

আগে সব অপকর্মের বিচার জরুরি

-

পরিবর্তিত নতুন রাজনৈতিক পরিসরে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে চারদিকে তুমুল বিতর্ক চলছে। অনেকে বলছেন, রাজনীতিতে ফিরতে হলে আওয়ামী লীগকে সংস্কারের মধ্য দিয়ে আসতে হবে। আবার কারো কারো মতে, দলটিকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা উচিত। কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। প্রশ্ন হলো, জনগণ কীভাবে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। অনুমান করা যায়, এ মত যারা দিয়েছেন তারা হয়তো বলতে চাইছেন, আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের মতামত জানাবেন। যদি এমন হয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। এর মানে দাঁড়ায়, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক পরিসরে জায়গা দেয়া উচিত।
ফ্যাসিবাদের ধারক-বাহক আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক পরিবেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই বলে অনেকে মনে করেন। যেমন, গণতান্ত্রিক জার্মানিতে হিটলারের নাজি পার্টি এবং ইতালিতে মুসোলিনির দলের রাজনৈতিক অধিকার এখনো রহিত রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কোনো স্থান নেই’। ‘ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য’ প্রদর্শনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত বুধবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশে স্বল্প মেয়াদে তার (হাসিনার) কোনো জায়গা হবে না, তার দল আওয়ামী লীগেরও কোনো জায়গা হবে না। কেননা, তারা দেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক কলকব্জা নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারা নিজেদের সুবিধায় রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেছে। সুতরাং তাদের মতো কোনো ‘ফ্যাসিস্ট দল’ গণতান্ত্রিক ধারায় স্থান পাবে না।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে হাসিনার দলের কোনো ভাগ্য বদল হবে না। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না তা নির্ধারিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যের’ ভিত্তিতে।
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিসরে আওয়ামী লীগের অবস্থান নির্ণয়ের আগে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রযন্ত্রের সব জায়গা থেকে ফ্যাসিবাদের উপাদানগুলো সমূলে উৎপাটন করা। এজন্য সবার আগে চাই রাষ্ট্র মেরামতে সংস্কার। কাক্সিক্ষত সংস্কার ছাড়া যে টেকসই গণতান্ত্রিক ধারায় যেতে আমরা ব্যর্থ হবো তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে যেভাবে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সরকারের সমালোচক, মানবাধিককারকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গুম-খুন, হামলা-মামলা এবং কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে, জঘন্য এসব অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। যারা এর সাথে জড়িত, তাদের পক্ষপাতহীনভাবে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা অন্তর্বর্তী সরকারের এই মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি কাজ।
আমরা বলতে চাই, শেখ হাসিনা এবং তার দোসর-সহচরদের বিচারের পর শাস্তি নিশ্চিত এবং একই সাথে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সাজা ভোগের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার থাকবে কিনা ভাবা যেতে পারে; তার আগে নয়।


আরো সংবাদ



premium cement