৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
কর্ণফুলী টানেল শ্বেতহস্তী

দেশের স্বার্থ লুণ্ঠিত হয়েছে

-

ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের কাছে দেশটা ছিল টাকা কামানোর মেশিন। সবকিছুকে তারা দেখেছে স্বার্থ হাসিলের মতলবি দৃষ্টিতে। কোন প্রকল্প নিলে ক্ষমতাসীন পরিবার, দল ও নেতা-মন্ত্রীদের কত অর্থ কামাই হবে সেই বিবেচনায়ই কথিত উন্নয়ন অগ্রাধিকার নির্ধারিত হয়েছে। এ জন্য বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বিশাল সব মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এসব অবকাঠামো জনগণের উপকারে আসবে কি না তার বিশ্বাসযোগ্য সমীক্ষা করা হয়নি। ঋণদাতারাও এর পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে। চড়া সুদে বিনিয়োগ করেছে, আবার নিজেদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত টালেন এমনই এক প্রকল্প। বিশাল অঙ্কের অর্থ ভাগবাটোয়ারা হওয়ার পর নির্মিত এই টানেল এক শ্বেতহস্তীতে পরিণত হয়েছে।
গতকাল সোমবার টানেলটির যাত্রা শুরুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। দেখা গেল, এক বছরে টোল আদায় হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। অন্য দিকে শুধু এর রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। টোল থেকে দৈনিক যে আয় তার প্রায় চার গুণ ব্যয় হয় টালেনের প্রতিদিনের পরিচালনায়। টানেল নির্মাণে ব্যয় হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। সহযোগী একটি দৈনিকে একে এখন ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। প্রকল্প গ্রহণ, এর সম্ভাব্যতা নিয়ে সমীক্ষা সবই করেছে চীন। সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে করা হয়েছে একতরফা ঋণচুক্তি। তাতে সব শর্তই চীনের অনুকূলে। ঠিকাদারির পাশাপাশি টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের। শুধু ঝুঁকির সবদিক বাংলাদেশের কাঁধে।
চীনা কোম্পানির সমীক্ষায় পূর্বাভাস দেয়া হয়, দিনে ১৮ হাজার ৪৮৫টি গাড়ি টানেলে চলবে। এ সংখ্যা প্রতি বছর ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়বে। ২০২৫ সালে দৈনিক গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি গাড়ি চলবে। ২০৩০ সালে সংখ্যাটি দাঁড়াবে দৈনিক ৩৮ হাজার। প্রথম বছরে তাদের সমীক্ষার ফলাফল বিশাল বড় মার্জিনে ভুল প্রমাণিত হলো। দেখা গেল, দিনে মাত্র তিন হাজার ৯১০টি গাড়ি চলেছে। ভারী যানবাহন না চলায় টোলও পাওয়া যাচ্ছে সামান্য। আগামী দিনে যে গাড়ি চলাচল বাড়বে তারও সম্ভাবনা সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। টানেল থেকে প্রতিদিন যে আয় হবে তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করতে হবে রক্ষণাবেক্ষণে। এর সাথে সামনে যুক্ত হতে যাচ্ছে ঋণের কিস্তির টাকা। ২ শতাংশ সুদহারে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে ১৫ বছরে।
বিনিয়োগকারীরা প্রথমে বাজেট দিলো নিজেদের খেয়ালখুশি মতো। তারপর তারা টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও বাগিয়ে নিয়েছে। এ জন্য দৈনন্দিন যে খরচ সেটিও তারা সরকারের কাছ থেকে পাবে। সবমিলিয়ে বিনিয়োগ যারা করেছে তারা লাভের ওপর লাভ করছে। অন্য দিকে বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ে চেপে বসল ঋণের বোঝা।
হাসিনা সরকারের সময় এ ধরনের ডজন ডজন প্রকল্প হয়েছে। যেগুলোতে জনগণের পক্ষে কেনো শর্ত আরোপ করা হয়নি। এর বিনিময়ে তারা নিজেরা অবৈধভাবে লাভবান হয়েছে। দেশকে দেউলিয়া করে দিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এবং বিদেশী শক্তি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement