২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কৃষিপণ্য পরিবহনে বিশেষ ট্রেন

সফলতা পেতে সমন্বয় দরকার

-

কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে তরিতরকারির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। অতি বৃষ্টি ও বন্যায় ফসলের মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় সরবরাহে বড় সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। কোনো সবজির দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। এমন কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না তার দাম ১০০ টাকার নিচে। পণ্যের দু®প্রাপ্যতা দেখা দিলে সেটির দাম কত বাড়তে পারে তার একটি আন্দাজ অনুমান আছে। কিন্তু তা ১০ গুণ বা তার চেয়েও বেশি বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক। এর সাথে বাজার ব্যবস্থাপনার সখ্য গড়ে না ওঠার সম্পর্ক রয়েছে। একটি শ্রেণী রয়েছে, কোনো ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই তারা সেটিকে ইস্যু করে বাজারে পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের অসুস্থ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।
এই সঙ্কটের সময়ে কৃষিপণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন চালু করেছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, স্বল্প খরচে রাজধানী ঢাকায় সবজি পৌঁছানো। প্রথম সপ্তাহে তিনটি ট্রেন চালু করা হলেও পণ্য পরিবহনে সাড়া পাওয়া যায়নি। ২২ অক্টোবর যশোর থেকে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধন করা হয়। ট্রেনটি মাত্র ২৬৮ কেজি কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকা আসে। দ্বিতীয় স্পেশাল ট্রেনটি ২৪ অক্টোবর পঞ্চগড় থেকে কোনো কৃষিপণ্য ছাড়াই ঢাকায় আসে। ২৬ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তৃতীয় ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে ঢাকার দিকে। এটিও কোনো কৃষিপণ্য ছাড়া ঢাকায় আসে।
সহযোগী একটি দৈনিকে ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনে সাড়া না পাওয়ার কারণ তুলে ধরা হয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, রাজশাহী থেকে ঢাকায় প্রতি কেজি কৃষিপণ্য পরিবহনে ভাড়া ধরা হয়েছে এক টাকা ৩০ পয়সা। এর সাথে কৃষক কিংবা ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে মাঠ থেকে রেলওয়ে স্টেশন এবং সেখান থেকে মোকামে পৌঁছানোর খরচ। সব মিলিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা কেজিপ্রতি ভাড়াবাবদ খরচ পড়ে যাচ্ছে। তারা জানাচ্ছে সড়কপথে ট্রাকে পণ্য পরিবহনে খরচ হয় দুই-আড়াই টাকা। বাড়তি দামে পরিবহন ছাড়াও ট্রেনের সময়সূচির সাথে মাঠ থেকে ফসল উত্তোলন ও মোকামে পৌঁছানোর সময়ের মিল নেই। সময়মতো পৌঁছানো না গেলে বাজার ধরা যায় না। এতে দাম না পাওয়া এবং কাঁচা পণ্য পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বাজারে কৃষিপণ্যের অগ্নিমূল্যের বিষয় বিবেচনা করে সরকার তড়িঘড়ি করে বিশেষ ট্রেন চালু করেছে। তাই এর উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে সফল হয়নি। কর্তৃপক্ষকে এই উদ্যোগ সফল করতে হলে কৃষক ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে বসতে হবে। তাদের কাছে এটিকে লাভজনক করে তোলা গেলে বিশেষ ট্রেন প্রকল্প রাজধানীর বাজারে কৃষিপণ্যের বাজারে স্বস্তি আনতে পারে।
জানা যাচ্ছে, একটি ট্রেনের আপ-ডাউনে দুই হাজার ৪০০ লিটার জ্বালানি লাগে। অন্যান্য সব মিলিয়ে এতে খরচ হয় দুই লাখ টাকার বেশি। এই উদ্যোগ রাজধানীর বাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ল না। অথচ বিপুল অর্থ গচ্চা গেল। এমন প্রকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। তবে রেলওয়ে বলছে, এ প্রকল্প সুফল আনতে পারে। কারণ এতে সবজি মাছ গোশত ফলসহ পচনশীল পণ্য পরিবহনের বিশেষ সুবিধা আছে। যা ট্রাকে কিংবা অন্য পরিবহনে নেই। বিষয়টি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে। প্রচারণা চালাতে হবে। সেটি করা হয়নি।
এই শুভ উদ্যোগ সফল করতে ব্যাপকভিত্তিক প্রচার চালাতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement