২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জাবির ছয় হলে ত্রুটি-অব্যবস্থাপনা

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

-

বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কাগজ-কলমে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হলেও সে বৈশিষ্ট্য হারিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। কয়েক দশক ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঠাঁই হতো গণরুমে। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের থাকতে হতো মিনি গণরুমে। তবে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৪২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হয় ১০ তলাবিশিষ্ট ছয়টি হলের। হলগুলো চালু হওয়ায় আবাসন সঙ্কট দূর হলেও এর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। নয়া দিগন্তের জাবি প্রতিনিধির প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাবিতে নতুন নির্মিত চালু জওয়া হলগুলো হলো- বেগম রোকেয়া, তারামন বিবি, ফজিলাতুন্নেছা, শহীদ তাজউদ্দীন, শেখ রাসেল এবং কাজী নজরুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নতুন হলগুলোতে এখনো ডাইনিং ক্যান্টিন চালু হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের বাইরের হোটেলে বেশি টাকা দিয়ে নিম্নমানের খাবার খেতে হচ্ছে। এ ছাড়া এ ছাড়া হলগুলোতে নকশা ও নির্মাণগত বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে হলের বারান্দায় পানি জমে থাকে। লিফটগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল সময়মতো সাহায্যে কাউকে পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটে শিক্ষার্থীদের আটকা পড়ে থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, সদ্য চালু হওয়া হলগুলোর ফ্লোরের অনেক জায়গায় টাইলস ও প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে প্রতিটি নতুন হলের করিডোর এবং দুই ব্লকের মধ্যবর্তী ফ্লোরে পানি জমে যায়। ভারী বৃষ্টিপাত হলে রুমের বারান্দায় পানি জমে যায়।
প্রতিনিয়ত লিফটের কারণে নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কখনো বিদ্যুৎ না থাকায় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় লিফট। হলগুলোতে জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলেও লিফটম্যানকে সময়মতো পাওয়া যায় না। নতুন হলগুলোতে গ্রাউন্ড ফ্লোরে মসজিদ রাখার ফলে আজানের শব্দ শুনতে পান না শিক্ষার্থীরা।
হলের ওয়াশরুমগুলোতে উপরের তলার পানি চুইয়ে নিচে পড়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ওয়াশরুমের সেন্সর লাইটগুলো কাজ করে না। হলে ডাইনিং চালু না হওয়ায় বাইরে হোটেলে যেতে হয় খেতে। এ ছাড়াও হলগুলোতে পর্যাপ্ত লোকবলের সঙ্কট থাকায় হলের টয়লেট করিডোর প্রায়ই অপরিষ্কার থাকে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নতুন হলগুলোতে যেসব খাট, চেয়ার-টেবিল দেয়া হয়েছে, তা খুবই নিম্নমানের। বিপুল বাজেটের এসব আসবাবপত্রের কাঠামো এরই মধ্যে বেঁকে যচ্ছে। অনেক রুমের সিলিংফ্যান, লাইট, সুইচ নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা অফিসের পরিচালক প্রকৌশলী নাসিরউদ্দিন বলেন, হল নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থপতিদের নকশাগত ত্রুটির কারণে বর্তমানে নানা সমস্যা হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যাগুলো ওভারকাম করার চেষ্টা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, হলগুলোতে গিয়ে সমস্যাগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা এখনো হল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড়পত্র দেইনি। ছাড়পত্র দেয়ার সময় এসব বিষয় বিবেচনা করব।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা উচ্চশিক্ষা। নকশাগত বা অন্যবিধ ত্রুটি এবং নানা রকম অব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের যাতে দুর্ভোগ না ঘটে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। অবিলম্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সম্যক ব্যবস্থা নেবে সরকার; যাতে দুর্ভোগ না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement