২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নয়া দিগন্ত একুশ বছরে

সত্যের সঙ্গে প্রতিদিন

-

দেখতে দেখতে নয়া দিগন্ত দুই দশক পূর্ণ করে ২১ বছরে পদার্পণ করল আজ। নিখাদ বাংলাদেশপন্থী পত্রিকাটির ২০ বছর পূর্তির এই সময়ে আমাদের জাতীয় জীবনে ঘটেছে এক অভাবনীয় ঘটনা, যা বিশ্ব ইতিহাসেও বিরল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের অবসান ঘটেছে। হাসিনা প্রাণ বাঁচাতে তার মদদদাতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে দেশের মানুষ আজ মুক্ত পরিবেশে প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারছেন। তবে এ জন্য চড়ামূল্য দিতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় সহস্রাধিক তাজাপ্রাণ ঝরে গেছে হাসিনার লেলিয়ে দেয়া বিভিন্ন খুনে বাহিনীর হাতে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার। চির জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন চার শতাধিক।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ নয়া দিগন্তের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের জন্য যেমন, তেমনি জাতীয় জীবনেও। স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামলে এতদিন নয়া দিগন্ত ভিন্ন মতের মুখপত্র হিসেবে জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছে। এ জন্য কম মূল্য পরিশোধ করতে হয়নি। সরকারি রোষানলে পড়ায় দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর চরম অর্থসঙ্কটে পড়তে হয়। এখনো সেই পরিস্থিতির অবসান হয়নি। তবে আশা করা যায়, নয়া দিগন্ত বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনার যে অঙ্গীকার নিয়ে এতদিন পথ চলেছে মুক্ত পরিবেশে তা আরো বেগবান হবে। এতে পাঠকপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি পত্রিকাটি আর্থিক সঙ্কটও কাটিয়ে উঠতে পারবে। কারণ, পাঠক মানসম্পন্ন পত্রিকা চান। অতীতেও নয়া দিগন্ত পাঠকের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছে, এখনো পাবে- এমন আশা খুব বেশি নয়।
২০০৪ সালে জন্মলগ্ন থেকে নয়া দিগন্ত সর্বস্তরের মানুষের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছে। বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার চর্চার চেষ্টা করেছে দায়িত্বশীলতার সাথে। তবে শেখ হাসিনার পুরো দেড় দশক দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম থাকায় এই প্রয়াস প্রায়ই ব্যাহত হয়েছে। সত্যের টুঁটি চেপে ধরেছে ফ্যাসিবাদ। সত্য প্রকাশে নানা প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ বাধার সৃষ্টি করেছে। সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে বিপন্ন হয়েছে নয়া দিগন্তের অস্তিত্ব। তার পরও সব প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে নয়া দিগন্ত ‘সত্যের সঙ্গে প্রতিদিন’ সেøাগান নিয়ে জনগণের কাছে অবিকৃত বার্তা পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টায় নিরত থেকেছে, এখনো আছে।
২১ বছরে পা রাখতে গিয়ে নয়া দিগন্ত আজ স্বভাবত স্মরণ করছে জন্মকালীন উদ্বেগের কথা। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসের যাত্রার শুরুতে যেমন ছিল বাঁধভাঙা আনন্দ ও তীব্র শঙ্কা, তেমনি ছিল সামনে এগিয়ে চলার সুদৃঢ় প্রত্যয়। কিন্তু সামনে চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কেননা, পথের প্রতিটি বাঁকে রয়েছে খানাখন্দ, প্রতিবন্ধক আর বিপত্তি। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের এ দেশে মানুষের সব অধিকার যখন কেড়ে নেয়া হয়েছিল, তখন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নয়া দিগন্ত সেই গুরুদায়িত্ব যথাসম্ভব পালনের চেষ্টা করেছে। আজ দেশ যখন ফ্যাসিবাদমুক্ত তখন দেশ গড়ার কাজে নয়া দিগন্ত একটি দায়িত্বশীল পত্রিকা হিসেবে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
নয়া দিগন্ত পাঠকের কথা মনে রেখে চেষ্টা করে ঘটনার প্রকৃত চিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরতে। এ জন্য দরকার কেবল সাহস ও যোগ্যতা। দরকার যাদের জন্য এ কর্মপ্রয়াস, এই ঝুঁকি গ্রহণ তাদের অর্থাৎ পাঠকের সহানুভূতিও। পাঠকের পৃষ্ঠপোষকতাই আমাদের অদম্য সাহসের উৎস।
জনগণের ইচ্ছার কাছে কায়েমি শক্তি শেষ পর্যন্ত নত হতে বাধ্য হয়। তার প্রমাণ ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান। অতীতে হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। এটিই চিরন্তন বাস্তব সত্য। বৃহত্তর জনগণের সক্রিয় আকাক্সক্ষা ও উদ্দীপনায় জাতির কাঁধে চেপে বসা সিন্দাবাদের ভূত আছড়ে পড়বে। কুয়াশাচ্ছন্ন দুঃসময় কেটে আবার ঝলমলে দিন আসবে।
দীর্ঘ ২০ বছরের নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নয়া দিগন্ত তার মূল লক্ষ্য, দর্শন থেকে কিছুমাত্র বিচ্যুত হয়নি। মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে নয়া দিগন্ত সবসময়, সব পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের কথা বলছে, মানুষের অধিকারের কথা বলছে। অনাগত দিনেও এ আদর্শে অবিচল থাকবে ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে যারা বিজ্ঞাপন দিয়ে, পত্রিকা বিপণন করে দীর্ঘদিন আমাদের চলার পথে সহযোগিতা করেছেন তাদের এবং সব পাঠক শুভানুধ্যায়ীকে আজকের এই শুভ দিনে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


আরো সংবাদ



premium cement