২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দাবি আদায়ে অযৌক্তিক চাপ

কৌশল ও দৃঢ়তায় মোকাবেলা করুন

-

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশে দাবিদাওয়া আদায়ের হিড়িক পড়েছে। নানা শ্রেণিপেশার মানুষ দাবি আদায়ে শুধু রাজপথে নামেনি; এ মুহূর্তে দাবি পূরণে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ রীতিমতো যুদ্ধংদেহী। এটি ঠিক যে, গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে আওয়ামী দোসর ও অনুগতরা সবরকম সুবিধা পেয়েছে। বাকি সবাই বঞ্চিত ও নিপীড়িত হয়েছেন। সেই বঞ্চনার অবসান তারা চাইতেই পারেন। সেটি স্বাভাবিক। প্রশাসনসহ সরকারের নানা দফতরে এ ধরনের বঞ্চিতদের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু দাবি আদায়ের নামে ভিন্ন কিছু হচ্ছে না তো? দাবিদাওয়ার আড়ালে স্বৈরাচার ফিরিয়ে আনার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে না তো?
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের কাল্পনিক অভিযোগ তুলে তাদের মাঠে নামানো হয়। আনসারদের দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব যে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের নীলনকশায় হয়েছে এবং হচ্ছে- তা প্রমাণিত। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য এসেছে।
সর্বশেষ দাবি এসেছে এইচএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। তাদের দাবিটি অভিনব। কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া যায়নি সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের এসএসসির প্রাপ্ত নম্বরের সাথে ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হয়। এটি করা হবে, আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। সবাই তা মেনেও নিয়েছিল। এখন ফেল করা শিক্ষার্থীরা বলছেন, সব বিষয়ের সাথে ম্যাপিং করে ফল ঘোষণা করতে হবে। তা অবিলম্বে করতে হবে। তাদের ঘেরাওয়ের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন আন্তঃবোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনরত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
ক’দিন আগে সরকারি দফতরে আউটসোর্স হিসেবে নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। তাদের বেতন বকেয়া পড়ে থাকলে সেটি তারা চাইতে পারেন; কিন্তু উন্নয়ন খাতের চাকরি রাজস্ব খাতে নেয়ার দাবি পরিস্থিতি জটিল করার অপচেষ্টা। কারণ তারা চাকরির শর্ত জেনে তাতে যোগ দেন।
এসব দাবি পূরণের বিষয়ে দ্রুত সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসা জরুরি। তবে আমরা মনে করি, সিদ্ধান্ত নিতে হবে দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে। এ ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়ার সুযোগ নেই।
পতিত সরকাররি দল আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা মাত্রাতিরিক্ত সক্রিয়। সরকার নমনীয় হতে থাকলে সুযোগসন্ধানীরা একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পুরনো নৈরাজ্য ফিরিয়ে আনতে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দাবি আদায়ের রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা যেমন দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করা হয়েছে, সরকারের কাছে সেই রকম শক্ত অবস্থান কাম্য।
অন্তর্বর্তী সরকার চোরাপথে ক্ষমতায় আসেনি। ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচার হটিয়ে এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। দেশবিরোধী শক্তির দোসররা দাবি আদায়ের নামে দেশবাসীকে পণবন্দী করবে- এটি হতে দেয়া যায় না। এসব দাবি মূলত সরকারকে অস্থির করার চক্রান্ত। এর মোকাবেলায় সরকার কার্যকর কৌশলের পাশাপাশি প্রয়োজনে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে- এটি জনগণ দেখতে চায়। তাতে সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন দৃঢ় হবে।


আরো সংবাদ



premium cement