২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন

মানুষের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে

-

ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনকালে মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া সর্বসাধারণের অবস্থা ছিল খুব নাজুক। সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলে দেশের মানুষ মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। তবে পতিত মাফিয়া সরকারের দোসররা বিভিন্ন খাতে এখনো বহাল তবিয়তে থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। যার কারণে গণমানুষের জীবনে এখনো পুরোমাত্রায় স্বস্তি ফিরে আসেনি।
স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী ছাড়া সাধারণ মানুষের জীবন ছিল দুর্বিষহ। বাস্তবতা হলো, দেশ হাসিনার শাসনমুক্ত হওয়ার পরও নিত্যপণ্যের দামের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই, যার দামে স্বস্তি আছে।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহে অর্থাৎ ৭ থেকে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে ১২টি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেল, পাম তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল, আলু, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, দারুচিনি, ধনে, গরুর গোশত ও ডিম। ডিমের দাম নতুন করে ডজনপ্রতি ১২ টাকা বেড়েছে। খোলা সয়াবিনের দামও বেড়েছে। এ নিয়ে এক মাসে দাম বাড়ল চার টাকা। আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা, পেঁয়াজ পাঁচ টাকা এবং গরুর গোশতের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা বাড়তি। টিসিবির তালিকায় শাকসবজির দাম উল্লেখ থাকে না। যদিও বাজারে সবচেয়ে চড়া দাম শাকসবজির। একেকটি শাকের আঁটি ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ টাকা। কোনো কোনো সবজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি।
স্বল্প আয়ের মানুষের প্রাণীজ আমিষের বড় উৎস ডিম। সেই ডিমের দাম অস্বাভাবিক। পাশাপাশি নতুন সঙ্কট হচ্ছে, পুরনো কৌশলে বাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে ডিমের সরবরাহ ব্যবস্থাতে বিঘœ তৈরি হয়েছে।
নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক করতে সরকার সুলভে ১০ পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ন্যায্যমূল্যে ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও সবজি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগের সরকার উদ্ভট সব পদক্ষেপ নেয়। অনেক টাকা ছাপিয়ে হাসিনা সরকার বাজারে ছেড়েছে, যার খারাপ ফল এখনো আছে। তবে বর্তমান সরকার বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বুঝেশুনে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি সামলাতে নতুন সরকারকে শুরু থেকে উদ্যোগী হওয়া দরকার ছিল। আমদানি ও শুল্ক কমানোর পদক্ষেপগুলো নিতে দেরি করেছে সরকার। ফলে নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হয়নি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমাতে এর আগে সরকার পেঁয়াজ ও আলুর শুল্ককর কমিয়েছিল। তখন দাম কিছুটা কমেছিল। পরে আবার বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরবরাহ বাড়িয়ে বাজারে প্রভাব ফেলতে হবে। তাই যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর সুফল যাতে পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারির বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে না পারলে সাধারণের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement