১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
উৎকণ্ঠায় ভবদহ পারের বাসিন্দারা

আর কত দিন জলাবদ্ধতা

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, পানি আর পানি চারদিকে। ডিঙ্গি নৌকা, বাঁশের সাঁকোই ভবদহ পারের বাসিন্দাদের ভরসা। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক প্রকার বন্ধ। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা তো রয়েছেই। কোথাও কোথাও মানুষ ও গবাদিপশু একসাথে বসবাস করছে। দীর্ঘ তিন দশক ধরে এমন অবস্থা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বাড়ে তাদের দুর্দশা। ফলে আকাশে মেঘ দেখলেই উৎকণ্ঠায় থাকেন ভবদহ পারের বাসিন্দারা।
যশোর জেলার মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর, বাঘারপাড়া ও সদর উপজেলা এবং খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ভবদহ সøুইসগেট। কিন্তু ভবদহ সøুইসগেট সংলগ্ন বিল নিচু এবং শ্রীহরি নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় পানি প্রবাহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থমকে গেছে। ভবদহ সøুইসগেটের বিপরীত পাশের শ্রীহরি নদীসহ খালগুলো পলিতে ভরাট হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, পাকিস্তান আমলে ‘সবুজ বিপ্লব’ বাস্তবায়নে ১৯৬২-৬৩ সালে ভবদহ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে তিনটি পোল্ডার, ১০ হাজার ৫৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ২৮২টি সøুইসগেট নির্মাণ করা হয়। আশির দশকে এসব অবকাঠামো ভবদহ বিলপাড়ের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। এ অঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসনে বহু অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু কোনো উদ্যোগই ফলপ্রসূ হয়নি। বরাদ্দের শত শত কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে।
১৯৯৭ সালে ভবদহ পানি সংগ্রাম কমিটি আড়িয়াল খাঁ ঘের কেটে শ্রীহরি নদীর সাথে বিল ভায়নায় জোয়ারাধার সৃষ্টি করলে পলি সরে যায়। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে বৈঠকে সংগ্রাম কমিটির জোয়ারাধারের এ ধারণা উত্থাপন করলে তা টিআরএম হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১১ সালে বিল কপালিয়ায় একই সমস্যা হলে টিআরএম চালু করার জন্য ৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তবে পাউবোর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বরাদ্দের টাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত যায়। দীর্ঘদিন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ভবদহসংলগ্ন শ্রীহরি, টেকা, আমডাঙ্গাসহ অসংখ্য নদী ও খালে পলি জমে বিল থেকে উঁচু হয়ে যায়। এতে ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মনিরামপুর উপজেলার কপালিয়া বিলপাড়ের মানুষ চাঁদা তুলে সেচপাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে। স্থানীয়দের এ ধারণা নিয়ে পাউবো ও বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) যৌথ উদ্যোগে সেচপাম্প চালু করতে ৩১ লাখ ৬০ টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ও ট্রান্সফর্মার নির্মাণসহ নানা কাজ করা হয়।
একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সঙ্কট উত্তরণে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে সেচপাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের অকার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ জন্য পাউবোর অসাধু কর্মকর্তাদের দুষছেন তারা। পাউবোর যশোর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, দ্রুত পানি নিষ্কাশনে ভবদহের দক্ষিণে পলি অপসারণসহ আলমডাঙ্গা খাল থেকে পলি অপসারণের কাজ চলছে।
ভবদহের বিস্তার যশোর-খুলনা দুই জেলাব্যাপী। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। অন্যথায় এ অবস্থার নিরসন হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement