২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মেট্রোরেল স্টেশন চালু নামমাত্র ব্যয়ে

মিথ্যাবাদীদের গালে চপেটাঘাত

-

কোটা আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের দু’টি স্টেশন চালু হলো নামমাত্র ব্যয়ে। সময়ও লেগেছে মাত্র তিন মাস। মেট্রোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পতিত স্বৈরাচারের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে এটি এক নীরব প্রতিবাদ। বলা যায়, মিথ্যাবাদীর গালে একটি জোরালো চপেটাঘাত।
আন্দোলনের সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন। স্বৈরাচারের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে রীতিমতো কান্নাকাটি করে বলা হয়েছিল- ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতই বেশি যে, এর মেরামতের জন্য সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। শুধু তাই নয়, এক বছরেও এটি মেরামত করা সম্ভব হবে না। পতিত ও পলাতক শেখ হাসিনা এমনই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন, যেন তার সমস্ত উন্নয়ন ধ্বংস হয়ে গেছে। শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তিনি দুঃখ পাননি। মেট্রোর ক্ষতিতে প্রকাশ্যে রুমালে চোখ মুছেছেন। এটি যে তার নিছক মায়াকান্না ছিল, জনগণের বুঝতে বাকি থাকেনি। সে জন্যই কোটার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে উত্তীর্ণ হয়। তখনকার সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যন্ত্রপাতি এনে এক বছরেও এটি সচল করা সম্ভব হবে না।’
মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনটি আলাদা মামলা করা হয়। রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দু’টি ও কাফরুল থানায় একটি। আসামি করা হয় সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের অজ্ঞাত ২১ হাজার নেতাকর্মীকে। মামলার এজাহারে বলা হয়- নাশকতায় মেট্রোরেলের ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অথচ বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার দেড় মাসের মধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন সচল করে। ব্যয় হয় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। আর ৯৮ লাখ ৭৮ টাকা অর্থাৎ এক কোটি টাকারও কম ব্যয়ে? গত মঙ্গলবার সচল করেছে মিরপুর-১০ স্টেশন। তবে এই স্টেশনের পুরোপুরি মেরামতে আরো ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ১৯ কোটি টাকা।
স্বৈরাচারী সরকারের যাবতীয় মিথ্যাচার ও লুটপাটের সব প্রামাণ্য তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে প্রতিদিনই। কিন্তু তাতে তার দোসরদের বিন্দুমাত্র লজ্জা পেতে দেখা যাচ্ছে না। যেমনটি দেখা যায়নি আন্দোলনকালে অসংখ্য শিশুসহ হাজারো মানুষের ওপর নির্বিচার গণহত্যা চালানোর ঘটনায়ও। ন্যূনতম অনুশোচনাও তাদের নেই; বরং অনেককেই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় গলা তুলতে দেখা যাচ্ছে। এটিই সত্যিকারের আওয়ামী চরিত্র। নিজেদের কোনো দোষ তাদের চোখে পড়বে না। অন্যের ক্ষেত্রে চুন থেকে পান খসতে দেবে না।
তারা যেকোনো মূল্যে সেই লুটেরা, মিথ্যাবাদী ফ্যাসিস্ট শাসন ফিরিয়ে আনার চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। প্রতিবিপ্লব ঘটানোর পাঁয়তারা কষছে। এদের শোধরানোর কোনো উপায় নেই। প্রাণী-বিশেষের লাঙ্গুল কোনোভাবেই সোজা করা যায় না। এটি ধ্রুব সত্য। একমাত্র উপায়, স্বৈরাচারের সব হোতা ও দোসরকে কঠোর বিচারের আওতায় আনা। তাদের লুণ্ঠিত সব অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা। তাহলেই কেবল দেশে স্থিতিশীলতা আসতে পারে।
দেশবাসী এ বিষয়ে সরকারের সক্রিয় ও একনিষ্ঠ ভূমিকা দেখতে চায়।


আরো সংবাদ



premium cement