১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম

‘শ্বেতহস্তী’ পুষতে হবে কেন

-

ঢাকঢোল পিটিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় শুরু করা হয় সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম। ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার আশায় পতিত হাসিনা সরকার স্কিমটি চালু করে। সমতা, সুরক্ষা, প্রগতি ও প্রবাস- চারটি স্কিমের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরে নতুন করে যুক্ত করা হয় ‘প্রত্যয় স্কিম’। প্রত্যয়ে শুধু সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এগুলোর অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ২০২৪ সালের পয়লা জুলাই ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়।
শুরুর সময় সর্বজনীন পেনশন স্কিম এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে এ ধারণা দেয়া হয় যে, সরকার বিশাল কিছু করছে। পতিত স্বৈরাচারের আমলের শেষ দিকে গৃহীত এই স্কিম এখন গ্রাহকস্বল্পতায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। বলা ভালো, মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক সময় প্রতিদিন যেখানে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চার-পাঁচ হাজার মানুষ নিবন্ধন করত; সেখানে বছরের ব্যবধানে তা কমে এসেছে চার-পাঁচজনে। কোনো কোনো দিন একজন গ্রাহকও এর সাথে যুক্ত হচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, যারা মাসে মাসে কিস্তির টাকা দিতেন, তাদের বেশির ভাগ আগ্রহ হারিয়ে চাঁদাও দিচ্ছেন না।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের বরাতে নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত পেনশন স্কিমে মোট নিবন্ধনধারীর সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৭২ হাজার ৩৭১ জন। তাদের কাছে থেকে চাঁদা হিসেবে পাওয়া গেছে ১৩০ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ অর্থ সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চারটি স্কিমের মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত সমতায় সবচেয়ে বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। এর সংখ্যা দুই লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন। এরপর সুরক্ষা স্কিমের নিবন্ধনের সংখ্যা ৬৩ হাজার ১২৫ জন, প্রগতিতে ২২ হাজার ৩৩২ জন এবং প্রবাসীদের জন্য নির্ধারিত প্রবাসে মাত্র ৮৯৪ জন নিবন্ধন করেছেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সাথে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য নির্ধারিত ‘প্রত্যয়’ স্কিম তীব্র সমালোচনা ও আন্দোলনের মুখে গত ২ আগস্ট সার্কুলার জারি করে প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। এই স্কিমে গ্রাহক কমে যাওয়ার এটিই অন্যতম কারণ।
স্কিমটি চালাতে সরকারকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়। স্কিমের সাথে গ্রাহক যুক্ত হন বা না হন, স্কিম পরিচালনায় গঠিত ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বহন করতে হচ্ছে। তাদের জন্য মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কাক্সিক্ষত সংখ্যক গ্রাহক না পাওয়ায় পুরো কর্তৃপক্ষ এখন একটি ‘শ্বেতহস্তীতে’ পরিণত হতে চলেছে।
পুরো স্কিম এখন বেসরকারি খাতনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ জন্য এ স্কিমের সফলতা অনিশ্চিত। তাই প্রশ্নবিদ্ধ এমন স্কিমের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা আদৌ আছে কি না তা পর্যালোচনা করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement