২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মরিয়া পতিত স্বৈরাচার

নাশকতা রুখতে হবে

-


অভূতপূর্ব একটি ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। গঠিত হয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। জাতির কাছে আস্থাভাজন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে দেশ পরিচালনা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ রচনার দায়িত্ব। কিন্তু এই সরকারকে স্বাভাবিক গতিতে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রতি মুহূর্তে বিতর্কিত এবং জনসমক্ষে হেয় করার অপপ্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে। নয়া দিগন্তের খবর অনুযায়ী, সরকারকে বিপদে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। হাজারো ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যার পরও বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই পতিত ফ্যাসিবাদী দলটির; বরং একের পর এক ইস্যু তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

মাফিয়া হাসিনা বিদেশে বসে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে দলীয় পাণ্ডাদের লেলিয়ে দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী দলের নানা পর্যায়ের পাণ্ডারা রীতিমতো সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে। একের পর এক চলছে সরকারকে বিতর্কিত করে তোলার অপচেষ্টা। পাশাপাশি সরকারের প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড তো আছেই। ডাকাতি, লুটপাট, সংখ্যালঘু ইস্যু এখনো চলছে। সাথে যোগ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত আওয়ামী গুণ্ডারা। গত শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক ব্যবসায়ীর বাসায় যৌথবাহিনীর নামে দুর্র্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। ঘটেছে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকারে উপর্যুপরি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।

এসব ঘটনা ঘটতে পারছে মূলত সরকারের অভ্যন্তরীণ সংহতি ঢিলেঢালা হওয়ায়। উপদেষ্টাদের মধ্যে চেতনাগত সাযুজ্যের ফারাক রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী যে চেতনায় ছাত্র-জনতার ঐক্য গড়ে উঠেছিল সেই চেতনার প্রতি অনেক উপদেষ্টার শৈথিল্য রয়েছে, এমন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সরকার এখনো প্রশাসনসহ সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও রয়েছে সংশয়। অবিলম্বে নির্বাচন দাবি করছে কোনো কোনো দল। সেটি হলে কোনো রকমে দায়সারা গোছের সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে সরকারকে। কিন্তু সমন্বিত ও কার্যকর সংস্কার সম্পন্ন করা ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য জরুরি। গণহত্যার বিচার হওয়ার আগে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেটি হলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার মোটেও শক্তিশালী হবে না।

আওয়ামী লীগ এক বিষবৃক্ষ। সরকারে থাকতে যেমন ফ্যাসিবাদী চেতনার ধারক-বাহক, বিরোধী দলে থাকলেও তেমনই। দেশ নয়, তাদের একমাত্র বিবেচনা দল ও ব্যক্তির স্বার্থ। বিএনপি যত দিন ক্ষমতায় ছিল তত দিন দেশে কিভাবে নির্বিচারে নাশকতা ঘটেছে জাতি তা ভুলে যায়নি। রেলে, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার রেকর্ড তৈরি হয় ওই সময়ে। বিএনপি সরকারের পুলিশ সেসব ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়তা পায়নি।
উপদেষ্টারা সচেতন, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আওয়ামী নাশকতা যেকোনো মূল্যে দমন করতে হবে। কালক্ষেপণ না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জনমনে এমন ধারণা দিতে হবে যে, জনগণের শক্তিতে দায়িত্ব গ্রহণকারী সরকার সক্ষম ও জনকল্যাণকর।


আরো সংবাদ



premium cement