২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, হাতবদল হয়েছে

দলগুলোকে কঠোর হতে হবে

-


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা মো: হাবিবুর রহমান ২০১০ সালে বলেছিলেন, বাজিকরদের হাতে পড়েছে বাংলাদেশ। এরপর আরো প্রায় এক যুগের বেশি সময় শেখ হাসিনা দেশ শাসন করেছেন। এই সময় বাজিকরদের উৎপাত বেড়েছে। মানুষের ওপর তাদের নিষ্পেষণ ও জুলুম আরো বিস্তৃত হয়েছে। পরিবহন খাত ছিল এমনই একটি খাত। সরকারের মন্ত্রী শাজাহান খান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা সারা দেশের পরিবহন খাতকে মাফিয়ার মতো নিয়ন্ত্রণ করেছে। ৫ আগস্ট ঘটে ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থান। এই খাত যদি আবারো কোনো বাজিকরদের হাতে বন্দী হয়ে যায় তাহলে বিপুল সংখ্যক বিপ্লবীর আত্মদান বৃথা হয়ে যাবে।

হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরপরই সারা দেশে তাদের মাফিয়া সাম্রাজ্যের হাতবদল হয়েছে। ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী কৌশলে কিছু নগদ অর্থ ও কর্তৃত্ব অন্যদের দিয়ে আপাতত সরে পড়েছে। নতুন করে যারা বিভিন্ন খাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তারা যদি হাসিনার বাজিকরদের মতো সব নিয়ন্ত্রণ করেন তাহলে গণ-অভ্যুত্থানের সুফল জনগণ পাবে না। পরিবহন খাত থেকে প্রতিদিন সারা দেশে বিপুল চাঁদাবাজি হয়। সহযোগী একটি দৈনিকে রাজধানীর পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির হাতবদল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে প্রতিদিন এক হাজার বাস চলাচল করে। আর পাঁচ শতাধিক বাস আশপাশের সড়কে চলাচল করে। টার্মিনালে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য গাড়িপ্রতি চাঁদা গুনতে হয়। টার্মিনালের সামনে দিয়ে চলাচলকারী দূরপাল্লার গাড়িকেও চাঁদা দিতে হয়। আশপাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করলেও টাকা দিতে হয়। প্রতিদিন এই টর্মিনাল থেকে ১০ লাখ টাকা আদায় হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাঁদাবাজির পরিমাণ ঠিক আছে শুধু এর আংশিক হাতবদল হয়েছে। তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালে দোকান, রেস্তোরাঁ এবং গোসলখানা রয়েছে। এখানেও আগের মতো চাঁদাবাজি চলছে। একই এলাকায় রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। এটি ঠিকাদারদের সাথে সওজের কর্মকর্তাদের ঘুষসংক্রান্ত বোঝাপড়ার জায়গা। সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একদল বিভিন্ন প্রকল্পের ভাগবাটোয়ারার কাজটি করতেন। যারা কাদেরের সাথে ঘুষ-দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন ৫ আগস্টের পর শ্রমিকরা তাদের অফিসে আসতে বাধা দেন। কয়েক দিন পর দেখা গেল ভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে আবার তারা অফিসে আসছেন। অর্থাৎ দুর্নীতিবাজ সওজের অফিসার পটপরিবর্তনের পর নতুন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আশ্রয় নিয়ে একই কাজে ফিরেছেন।

৫ আগস্টের পর সারা দেশে একই ধরনের অবস্থা দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে মার্কা মারা লোকেরা গা ঢাকা দিয়েছে। আর অন্যরা নতুনদের সাথে মিশে গেছে। সারা দেশে হাট-বাজার, বন্দর, টার্মিনালে চাঁদাবাজির হাতবদল ঘটেছে। এ কারণে আগের মতো পরিবহনে উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যের পেছনেও চাঁদাবাজি অনেকটা দায়ী।
প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পেতে হলে চাঁদাবাজি থেকে আমাদের উদ্ধার পেতে হবে। রাজনৈতিক দলে বিপ্লবের চেতনা না থাকলে এটি সম্ভব হবে না। বিশেষ করে বড় দলগুলোকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। তারা দখল ও চাঁদাবাজি নিয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলে সুফল মিলতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement