২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩০, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
বাহিনীর পোশাকে ডাকাতি

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার

-

গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। যারা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবেন তারাই নাগরিকদের গুম, খুন ও পীড়নের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তার পোশাক ও সরকারি বাহিনীর পরিচয় অপরাধ সংঘটনে তাদের শক্তি জুগিয়েছে। প্রথমে সরকার নিজের রাজনৈতিক ফায়দা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করেছে। সরকারের লক্ষ ছিল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। পরে বিভিন্ন বাহিনীর একটি অংশ এটিকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেছে। পুলিশ র্যা ব ও নানা নামের গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে ডাকাতি ছিনতাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এ সুযোগে এমন অনেকে একই অপরাধে যুক্ত হয় যারা এসব বাহিনীর সদস্যও ছিল না।
সরকারি বাহিনীগুলোকে নিয়মের বাইরে ব্যবহার করার কুফল ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপত্তা আশঙ্কা তৈরি করে রেখেছে। পুলিশ বাহিনীর একটি অংশের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, কিন্তু এ বাহিনীর মোটাদাগে পেশাদারিত্ব ছিল। পুরো বাহিনীতে মূলত সৎ যোগ্য ও দক্ষরাই ছিল নেতৃত্বে। পতিত হাসিনা তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে গিয়ে এ বাহিনীর নৈতিক ভিত্তি ভেঙে দেয়। আইনভঙ্গকারী, মানবাধিকার হরণকারী, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের তিনি পুরস্কৃত করতে থাকেন। অন্য দিকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ছিল সারাবিশ্বের অন্যতম একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। র্যা বকে পুলিশের মতো ব্যবহার করতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও কলুষিত করা হয়েছে। শেষে দেখা গেল, সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যকে দিয়ে গুম খুনের কাজ করানো হয়েছে। আয়নাঘর সৃষ্টি করা হয়েছে। ব্যাংক ও ব্যবসায় দখলে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।
বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মাফিয়া সরকার পালিয়ে যাওয়ার পরও আমরা দেখতে পাচ্ছি ডাকাতির ঘটনা ঘটানো হয়েছে সামরিক বাহিনী ও র্যা বের পোশাকে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে বাহিনী দুটোর পোশাকে দুই ডজনের বেশি লোক ডাকাতি করে এক ব্যবসায়ীর বাসায়। যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে শেষ রাতে তারা বাসায় ঢোকে। তবে তারা সবাই মুখোশ পরা ছিল। পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে নগদ ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায়। হাসিনার সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে যেভাবে বেআইনি সব কর্ম করা হয়েছে তারাও সেভাবে হানা দেয়। তারা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে বৈধ অস্ত্র থানায় জমা না দেয়ার। যদিও ওই ব্যবসায়ী জানান, সময়মতো তিনি অস্ত্র থানায় জমা দিয়েছেন। তার পরও ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্র খোঁজার নামে তার আসবাবপত্র তছনছ করে। পাশে থাকা অফিসে কথিত অভিযান চালিয়ে মূলত তার নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়।
বাহিনীর পোশাকে অপরাধ সংঘটন একটি গুরুতর বিষয়। এর আগে এ ধরনের অপরাধ যারা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ছাড়া বহু অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয়নি। ফলে এই চক্রের সদস্যরা সারা দেশে রয়ে গেছে। এ ধরনের অপরাধীদের শনাক্ত করে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে বাহিনীর কোনো সদস্য যদি এমন ন্যক্কারজনক অপরাধের সাথে জড়িত থাকে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নাজুক থেকে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement