২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সড়ক ধসে পড়ল খালে

সরকারের উদাসীনতার দৃষ্টান্ত

-

একটি সহযোগী দৈনিকের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় সড়কের পাশ খননযন্ত্র দিয়ে বালুর স্তূপ করায় মুন্সীগঞ্জ-সাতানিখিল ব্যস্ত সড়কটির অর্ধেক অংশ খালে ভেঙে পড়েছে। বাকি সড়কও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে ওই সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। ছোট যানবাহনও ঝুঁকি নিয়ে চলছে। বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কে।
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান ও তার লোকজন ব্যবসায় করতে খননযন্ত্র দিয়ে ওই বালুর স্তূপ করেন। অতিরিক্ত বালুর চাপে সড়কটি ভেঙে পড়ে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম পাশে সড়ক থেকে অন্তত তিন ফুট উঁচু করে বালুর বিশাল স্তূপ করা হয়েছে। সেই বালু পিচের সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বালুর সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কের পূর্ব পাশে খাল। পূর্ব পাশ দিয়ে সড়কটির ছয় ফুট প্রস্থ এবং দৈর্ঘ্যে ৭০-৮০ ফুট খালে ভেঙে পড়ে আছে। ভাঙা অংশে কয়েকটি গাছ ও পল্লী বিদ্যুতের একটি খুঁটিও হেলে পড়েছে। সড়কের নিচ দিয়ে বালুর স্তূপ থেকে পানি নির্গত হচ্ছে। এতে সড়কটির অবশিষ্ট অংশও নাজুক হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মহাকালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ব্যাপারী, আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দীন সিকদার ও ইউনিয়নটির ৫ নম্বর ইউপি সদস্য মাসুদ বালু-বাণিজ্য করতেন। ৫ আগস্টের পর সেই বাণিজ্য দখলে নেন উজ্জ্বল হালদার, জুয়েল দেওয়ান ও মিরাজ হালদাররা। দখলে নেতৃত্ব দেন যুবদল নেতা মুজিবুর। দেড় মাস ধরে মুজিবুরের নেতৃত্বেই বিভিন্ন জমি, জলাশয় দেদার ‘ভরাট বাণিজ্য’ করছে এ চক্রটি। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে বালু ব্যবসার জন্য সাতানিখিল সড়কের পাশের বিশাল পুকুর খননযন্ত্র দিয়ে ভরাট শুরু হয়। তখন বালুর চাপে সড়কের মাঝখানে ফাটল দেখা দেয়। মুজিবুর বাহিনী কোনোভাবেই ভরাট বন্ধ করেনি। বালুর স্তূপ রাস্তা থেকে কয়েক ফুট উঁচু করতে থাকে তারা। সড়কটি গাছপালাসহ খালে ভেঙে পড়ে। সড়কের যে অবস্থা, যেকোনো সময় সম্পূর্ণ অংশ ভেঙে পড়তে পারে। এতে যেকোনো সময় সড়কের দক্ষিণ পাশের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, সড়কটির পাশের পাঁচ-ছয়টি পরিবারের বসতঘরও ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে। সড়ক সঙ্কীর্ণ হওয়ায় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে থাকা পরিবারগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারছেন না।
এই বালুর ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন বলে কয়েকজন স্বীকার করেছেন। তবে রাস্তা ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘শুধু আমাদের বালুর জন্য রাস্তাটি ভেঙে পড়েনি’। এ পথে নিয়মিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, সড়কটি ভেঙে পড়ায় যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। যে কয়েকজন জরুরি প্রয়োজনে যাচ্ছেন, তারাও খুব ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন। তাই দ্রুত সড়ক সংস্কার, সড়কের পাশ থেকে বালুর ব্যবসায় অপসারণসহ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এ পথের যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। মুন্সীগঞ্জ সদরের ইউএনও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। ভেঙে যাওয়া অংশটুকু সংস্কার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
জড়িতদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘কারা জড়িত, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’
সরকার ইনঅ্যাক্টিভ বা নিষ্ক্রিয় হতে পারে না। সদা সর্বদাই প্রোঅ্যাক্টিভ বা সক্রিয় হতে হয়। তাই সরকারের উদাসীনতা কোনো ক্ষেত্রেই কাম্য নয়। আলোচ্য ক্ষেত্রে সরকার উদাসীন না হলে এমন অবস্থা হতো না। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement