কর্তৃপক্ষ কোথায় গেল?
- ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
একটি সহযোগী দৈনিকের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, ‘বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে একটু সুখে দেখব- এই আশায় জামাই ভুট্টু মিয়াকে (৩০) সৌদি আরব পাঠাই আট মাস আগে। কিন্তু বিদেশ যে এত বড় সর্বনাশ ডেকে আনবে সেটি বুঝতে পারিনি। জামাই বিদেশে গেছে ঠিকই, কিন্তু জীবন বাঁচানোর ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সে সুস্থ শরীরে বাড়িতে এলেই শান্তি। প্রতারকের জন্য জামাইয়ের জীবন এখন শঙ্কায়।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বাছহাটী গ্রামের দুলু মিয়া (৫৫)।
কৃষক দুলু মিয়া আরো বলেন, বিদেশ পাঠাতে চাইনি। প্রতিবেশী ফরমান আলীর ছেলে কামরুল হাসান লিটন (৪০) আমার জামাইকে বিদেশ পাঠানোর লোভ দেখায়। পরে বাধ্য হই সৌদি পাঠাতে। টাকা ছিল না বলে গরু বিক্রি করে আর সুদে দেড় লাখ টাকা নিয়ে দেই। বিধবা বেয়াইন জমি বন্ধক ও সুদে নেয় বাকি টাকা। লিটনের কথা মতো মোট চার লাখ ৫২ হাজার টাকা দেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি। তিন দিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি ফ্ল্যাইট হয়। ভাবছিলাম, বিদেশে উপার্জনের টাকা পাঠালে সুদের টাকা পরিশোধ করব। কিন্তু আট মাস হচ্ছে, টাকা পাঠানো তো দূরের কথা- জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে জামাই।
এ বিষয়ে কামরুল হাসান লিটনের সাথে একাধিক মিটিং করা হয়েছে। তিনি আমাদের পাত্তাই দিচ্ছেন না। পরে বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ প্রতারণার শিকার কেবল তিনি একাই নন। লিটনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন একই গ্রামের মাইদুল ইসলাম। কথা হয় তার স্ত্রী কাকলী বেগমের সাথে (২৫)। তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মাঝে মধ্যে অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে আমার স্বামী কল করে বলেন, আমরা খুবই বিপদে আছি। আকামা দেয়া হয়নি। জীবন বাঁচাতে তাই পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তোমরা আমাদের উদ্ধার করো।
কাকলী আরো বলেন, আমিও বিদেশ পাঠাতে চাইনি স্বামীকে। লিটন দিন-রাত তাকে ফুসলিয়ে রাজি করান। বিদেশ পাঠাতে চার লাখ ৫২ হাজার টাকার পুরোটাই সুদের উপর নিয়েছি। আট মাস হচ্ছে স্বামী নেই। পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিদেশের মাটিতে। আর এ দিকে দু’টি মেয়ে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে আমাদের।
তার ওপর সুদের টাকা পরিশোধ করতে বাড়তি চাপ। এ নিয়ে লিটনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা নাকি মিথ্যা বলছি। পরে বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত কামরুল হাসান লিটন বলেন, আমি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। আমি ঢাকার একটি অফিসের মাধ্যমে বিদেশ গিয়েছিলাম। সেই অফিসের ঠিকানা তাদের দেই। পরে তারা বিদেশে যায়। আমি শুধু মিডিয়া হিসেবে কাজ করেছি। তারা সৌদিতে ভালো আছেন।
এ বিষয়ে সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছিলাম। সালিসি বৈঠকের নির্ধারিত তারিখে লিটন ও তার বাবা ফরমান আলী আসেননি; বাবা-ছেলে উভয়েই প্রতারক। ভুট্টু ও মাইদুল জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি বলেন, এ বিষয়ে পৃথক দু’টি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কর্তৃপক্ষ শুধু কর্তাগিরি করলেই চলে না। কর্তৃপক্ষকেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বিদেশে গিয়ে যারা প্রতারণার শিকার হয়েছে, কর্তৃপক্ষ থাকলে তা হতো না। আলোচ্য ঘটনাগুলো পড়ে মনে হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলে কিছু নেই। নাগরিকদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচার জন্য অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের সক্রিয় হওয়া উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা