২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
‘বিদেশে অবৈধ পাসপোর্ট তৈরির চক্র’

দেশে কেন বৈধ পাসপোর্টের ব্যবস্থা থাকবে না?

-

একটি সহযোগী দৈনিকের আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, সৌদি আরবে অবৈধ অভিবাসী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী পরিচয়ে পাসপোর্ট তৈরি চক্রের মূল হোতা এক ব্যক্তি। পাসপোর্টের জন্য ভুয়া সব কাগজপত্র বাংলাদেশ থেকে সরবরাহ করেন তার দুই ভাই। জেদ্দায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব পাসপোর্ট বানানো হচ্ছে। প্রতিটি পাসপোর্টের বিনিময়ে নেয়া হয় ১৭ হাজার রিয়াল বা পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ঐ লোকের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়।
তার মাধ্যমে অভিবাসী রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাসিন্দা মো: ইউনুচ। পাসপোর্ট করিয়ে দেয়ার নামে আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত পেতে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। গত ২১ মে করা আবেদনপত্রের অনুলিপি পুলিশ সুপার ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ১৪টি দফতর প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে। আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়- সৌদি আরবে থাকাকালে ব্যক্তিগত পাসপোর্টের কাজে জেদ্দায় বাংলাদেশ দূতাবাসে যান ইউনুচ। সেখানে নোয়াখালীর এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয় তার। পরে কামালের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ও আনোয়ারা উপজেলার দু’ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। তারা তিনজনই বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট জালিয়াত চক্রের সদস্য। ইউনুচের বাড়ি কক্সবাজার হওয়াতে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বানিয়ে কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখেন তারা। ইউনচও এ কাজে জড়িয়ে পড়েন। তার মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে অভিবাসী রোহিঙ্গাদের কয়েক শ’ পাসপোর্ট বানিয়েছেন ইউনুচ। তবে কাজ চলমান অবস্থায় ৯১টি পাসপোর্ট আটকা পড়ে দূতাবাসে। ৯১টি পাসপোর্ট বানাতে আকবরকে ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পাসপোর্টগুলো আটকে পড়ার অজুহাত দেখিয়ে এসব টাকা আর ফেরত দিচ্ছেন না। আবেদনকারী জানান, জাল জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন ওই লোক। এ কাজে তার সাথে জড়িত তার তিন সহোদরসহ বড় একটি চক্র। এভাবে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে কোটিপতি বনে যান তিনি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে বেশ কয়েকটি দোকান এবং নিজ এলাকায় কোটি কোটি টাকার জমি কিনেছেন। এমনকি তিনি ও তার ছোট ভাই রুহুল আমিনের ব্যবহৃত পাসপোর্টও জাল বলে উল্লেখ করা হয় আবেদনপত্রে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১২ সালে হজ পালন করতে গিয়ে দেশে না ফিরে থেকে যান সৌদি আরবে। সেখানে জেদ্দায় প্রবাসী ছোট ভাইয়ের আশ্রয়ে থাকেন বেশ কিছু দিন। এর মধ্যে নিজের জন্য বাংলাদেশী, অন্যজনের পাসপোর্ট কিনতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন দালালচক্রে। সৌদি আরবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় যাওয়া প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে। মিয়ানমারের বাসিন্দা হলেও নাগরিকত্ব না থাকায় এসব রোহিঙ্গা নানা কৌশলে বাংলাদেশী পাসপোর্ট জোগাড়ের চেষ্টায় থাকেন। তাদেরই মূলত টার্গেট করে এসব অবৈধ পাসপোর্ট বানানো হয়। পাসপোর্ট জালিয়াতি ও অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে ভাই বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভিযোগটি করেছেন তাকে আমরা চিনি না। তাকে খুঁজেও পাইনি। অভিযোগটি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে করা হয়েছে।’
তিনি ও তার ছোট ভাইয়ের ব্যবহৃত পাসপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তাজ বিল্লাহ বলেন, ‘পাসপোর্ট দু’টির ফটোকপি দেখে জানতে পেরেছি, এগুলো সৌদি আরবের জেদ্দা কনস্যুলেট থেকে করা হয়েছে। এর বেশি কিছুই বলতে পারছি না। বিস্তারিত জানতে চাইলে জেদ্দায় কনস্যুলেটে যোগাযোগ করেন।’
বিদেশে অবৈধ পাসপোর্টের চক্র থাকলে দেশে বৈধ পাসপোর্টের ব্যবস্থা কেন থাকবে না? তাহলে বাংলাদেশের মানুষ হয়রানির হাত থেকে রেহাই পাবে এবং অবৈধ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পরিচয় দিতে পারবে না। কোনো সুবিধাবাদী লোক প্রতারণা করতে পারবে না।


আরো সংবাদ



premium cement