২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ জরুরি

না হলে বিপ্লব বেহাত হতে পারে

-

জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অকাতরে আত্মদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশের প্রতিটি বাহিনীকে জনতার ওপর গুলি চালানোর আদেশ দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র পেটোয়া বাহিনী। এমনকি আমাদের বাহিনীর পোশাক পরে বিদেশী ঘাতক বাহিনীও ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে। এর পরও জালিম হাসিনা টিকতে না পারার কারণ মানুষের মুক্তির বাসনা। তারা মৃত্যুকে তুচ্ছ করে রাজপথে লড়াই করেছে। তারা একটা চেতনা নিয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াতে সেই চেতনার প্রতি শিথিলতা দেখা গেল। এখন বিপ্লবের জনআকাক্সক্ষার রূপায়ণ নিয়ে ক্রমে জনমনে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে সংলাপে বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার বিরোধীরা সরকারে কেন? অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের শুরুতে এই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিপ্লবে অনুঘটকের ভূমিকা পালনকারী সামাজিক মাধ্যমের জনপ্রিয় অ্যাক্টিভিস্টরাও। এমনকি সরকার গঠনের প্রথম সপ্তাহে এক উপদেষ্টা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে তার সংগঠন গোছানোর পরামর্শ দেন। তিনি ভুলে গেলেন এরা প্রায় দেড় হাজার মানুষ হত্যা করেছে, অন্ধ ও পঙ্গু করে দিয়েছে ৩০ সহস্রাধিক মানুষকে। সেই উপদেষ্টাকে পরে তার পদ থেকে অন্য পদে সরিয়ে দিলেও এ সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা-সদস্য এবং গঠিত সংস্কার কমিটিগুলোতে ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা স্থান পাচ্ছেন। বিশেষ করে জনপ্রশাসনে।
দুই মাস হয়ে গেলেও সরকার প্রশাসনে গতিসঞ্চার করতে পারেনি। নানা মহল থেকে বাধা দেয়া হচ্ছে যাতে সরকার সাবলীলভাবে কাজ করতে না পারে। একই অবস্থা পুলিশ প্রশাসনে। সামরিক বাহিনীর ক্ষুদ্র একটি অংশ ছাড়া সবাই বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ভঙ্গুর অবস্থায় সারা দেশে শূন্যতা পূরণ করেছে সামরিক বাহিনী। গুম খুন আয়নাঘরের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত অংশটি কোনোভাবে এ সময় দায়িত্বে থাকতে পারে না। তাদের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজনৈতিক মহল থেকেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নিয়ে সতর্ক অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দলটি সবচেয়ে বেশি চড়াও হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের ওপর। দল দু’টির নেতাকর্মীদের গুম-খুনে সহযোগী হয়েছে এবং জনগণের নাগরিক অধিকার হরণে হাসিনাকে শক্তি জুগিয়েছে। হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করেছেন দলটিতে এমন একজন নেতাও পাওয়া যাবে না। সেই দলটিকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার কথা বলছেন বড় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা। অপরাধীদের বিচার না করে রাজনীতিতে পুনর্বাসনে বিপদের দিকটি উপেক্ষিত হচ্ছে।
বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা ফলপ্রসূ করার কিছুই এখনো শুরুই করা যায়নি। এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা সবখানে বহাল আছে। তারা বিপ্লব ব্যর্থ করতে যেকোনো সময় নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। তাতে বিপন্ন হবে বিপ্লবীদের জীবন। পতিত সরকারের সুবিধাভোগী যারা সরকারে আছেন তাদের কিছুই হবে না। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।
জুলাই বিপ্লবের চেতনাবিরোধীদের সরকারে জায়গা দেয়ার অবকাশ নেই; বরং জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় সমর্থক কুশীলবদের নিতে হবে। তারাই বিপ্লবের মর্ম বোঝেন, তাই তারা একে সফলতায় পৌঁছাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement