প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
- ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত শুক্রবার ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে আসেন। এটি ছিল স্বৈরাচারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো বিদেশী রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের প্রথম সফর। আনোয়ার ইব্রাহিম সফরকালে ড. ইউনূস সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তা পুনর্গঠনে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করার কথা বলেন।
চার ঘণ্টারও কম সময়ের এ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে আমরা মনে করি। কারণ এই প্রথম দেখা গেল, সম্পর্কোন্নয়নের গালভরা বুলি শুধু নয়, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেন সফরকারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে নানা জটিলতায় মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৮ হাজার শ্রমিককে সে দেশে যেতে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত স্বৈরাচারী সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে গত জুন মাসে অন্তত ৩১ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। এ জন্য সরকারের জনশক্তি মন্ত্রণালয় ও তার মদদপুষ্ট দুষ্টচক্র দায়ী। অথচ ভিটেমাটি বিক্রি করে, পরিবারের গয়নাগাটি বন্ধক রেখে অথবা ধারকর্জ করে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নেন ওই সব কর্মী। স্বৈরাচারী সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার মধ্যে প্রবাসী কর্মসংস্থানের ব্যর্থতাও অন্যতম।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার এবং বাংলাদেশে অষ্টম শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ৩৮৬ কোটি ডলার। এমতাবস্থায় আনোয়ার ইব্রাহিমকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানোর মধ্যে ড. ইউনূসের কাজের অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিশ্বস্ত বন্ধুও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গাসঙ্কট মোকাবেলায় মালয়েশিয়ার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সেই সাথে আসিয়ান কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়টিও উত্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম অভিবাসন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রথম পর্যায়ে ১৮ হাজার কর্মী নেয়ার পর পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা আরো বাড়ানোরও আশ্বাস দিয়েছেন।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তার দেশে আরো জনশক্তি প্রয়োজন। তবে উভয় দেশের মধ্যে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এ ছাড়া সেমি কন্ডাক্টর, ডেটা সেন্টার, এআই, নিউ টেকনোলজির বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মতির কথা জানান।
উল্লেখ করা যেতে পারে, মালয়েশিয়া এখন শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশ্বিক পর্যায়ে বড় ভূমিকা রাখছে। অনেকগুলো আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বিশ্বের স্কলাররা গবেষণা করছেন। সে দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সেন্টার আছে, যেখানে ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসায় ও তিন শূন্যের ধারণা প্রচার করা হয়।
আমরা আশা করতে পারি, দেশের প্রতিটি খাতে এখনো বহাল থেকে যাওয়া পতিত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস এড়িয়ে নির্বিবাদে কাজ করে যেতে পারলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি শুধু যে পায়ের নিচে দৃঢ় ভিত্তি খুঁজে পাবে তাই নয়; বরং এটি এই অঞ্চলের শীর্ষ বিকাশমান রাষ্ট্রের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা