২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অধ্যক্ষ লাপাত্তা : কার্যক্রম স্থবির

শিক্ষার এ কি হাল

-

গত সরকারের সময়ে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ভাতিজি জামাই হিসেবে পরিচয় দিতেন পাবনার বেড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক। ওই পরিচয়ে প্রভাবশালী হয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কলেজে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সমালোচিত হয়েছিলেন। টুকু পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করলে এই অধ্যক্ষ লাপাত্তা হয়ে যান। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কলেজে অনুপস্থিত। যার কারণে কলেজের অ্যাকাডেমিক ও দাফতরিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ছিলেন এই অধ্যক্ষ।
৫ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলেজে অনুপস্থিত থাকায় অধ্যক্ষের কক্ষে ঝুলছে তালা। কক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকায় শিক্ষক ও কর্মচারীরা স্বাক্ষর করতে পারছেন না। এক শিক্ষক জানান, প্রিন্সিপাল সারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার পর তিনি আসবেন আসবেন বলে আর আসেননি। এতে কলেজ পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এলাকার প্রতিটি নির্বাচনে অনিয়ম ও ভোটচুরি করার নেতৃত্ব দিতেন এই অধ্যক্ষ। ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর বড় ছেলে আসিফ শামসকে বিজয়ী করার জন্য শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেন। আর বৈঠকের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এরপর এই অধ্যক্ষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা বেড়া উপজেলার শিক্ষকদের নিয়ে নৌকার এমপি প্রার্থী শামসুল হক টুকুর পক্ষে বৈঠক করেন। বিরোধী প্রার্থীরা এ বিষয়ে জানালে নির্বাচন কমিশন শামসুল হক টুকুকে শোকজ করে। তবে অধ্যক্ষ টুকুর প্রভাবে বারবার পার পেয়ে গেছেন।
এই কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালমান হোসেন বলেন, বেড়া সরকারি কলেজের ফেসবুক পেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ না নিতে বলা হয়েছিল।
আরেক সমন্বয়ক মো: তৌফিক হাসান রাফুল জানান, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ভাবে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের ছবি দেখিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ নেয়া হয়েছিল। আর অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক পুলিশি হয়রানিতে সাহায্য করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে কলেজে অনুপস্থিত হওয়ায় ও তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না, তবে শিগগিরই কলেজে যোগদান করবেন।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বেড়া কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক সাহেব যে ৪৬ দিন কলেজে আসেননি, এটি আমার জানা নেই। মাঝখানে এক দিন তিনি কলেজে এসে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে কলেজ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলেজ শিক্ষাকে উচ্চ শিক্ষা ধরা হয়। মাঝারি শিক্ষা ধরা হলেও এটি কম নয়। শিক্ষা সবার জন্য, এই মুখরোচক কথাটি আমরা অনেক দিন থেকে শুনে আসছি। কিন্তু বেড়া সরকারি কলেজের ঘটনাটি এ কথাটি প্রমাণ করে না। অবিলম্বে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আমরা আশা করি।


আরো সংবাদ



premium cement