২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পুলিশের পলাতক সদস্যদের নিয়ে উদ্বেগ

অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে

-

পুলিশের অন্যতম কাজ ছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া; কিন্তু গত ১৬ বছরে পুলিশ বাহিনীর অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিরোধী দল ও ভিন্ন মতের মানুষকে দমন, নির্যাতন, নিপীড়ন ও নিধন করা। পুলিশ কেবল ফ্যাসিস্ট সরকারের হুকুমেই এই গণবিরোধী ভূমিকা পালন করেছে, বিষয়টি তেমন নয়; বরং এর পেছনে তাদের নানারকম অবৈধ সুযোগ-সুবিধা বা স্বার্থ হাসিলের সম্পর্ক ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা হেন কোনো কাজ নেই যা করেনি। ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালিয়েছে তারা।
ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন পুলিশ যেভাবে ছাত্র-জনতাকে পাখির মতো নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ১৫ শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আহত করা হয়েছে ৩০ সহস্রাধিক মানুষকে। আহতদের অনেকে হাত-পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। অনেকে হয়েছেন অন্ধ।
পুলিশের যেসব শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশে গণহত্যা ঘটে শেখ হাসিনার পতনের পর তাদের বেশির ভাগই দেশ ছেড়েছে, অনেকে দেশেই গা-ঢাকা দিয়ে আছে। পলাতক এসব সদস্যকে নিয়ে জনমনে একধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।
নয়া দিগন্তের এক খবরে বলা হয়েছে, অনেকে আশঙ্কা করছেন, পলাতক পুলিশ সদস্যরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের নাশকতায় জড়াতে পারে। দেশকে অস্থির করে তুলতে এরা নিজেদের পরিচিত। আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া, দেশী-বিদেশী উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে বলেও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এদের অনেকে নিজের নামে ইস্যু করা হাতিয়ার নিয়মমাফিক জমা না দিয়ে লাপাত্তা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই হাতিয়ারগুলোও তারা অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি তারা অপরাধী। তাদের আমরা পুলিশ বলব না, অপরাধী বলেই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি এসব অপরাধী পুলিশ সদস্যকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
নয়া দিগন্তের খবরে পলাতক পুলিশ সদস্যদের নিয়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা বলা হয়েছে, সম্প্রতি সচিবালয়ে আনসার বিদ্রোহ, গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা ও অশান্ত পার্বত্যাঞ্চলের দিকে তাকালে স্পষ্ট, সে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অমূলক নয়।
আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছি, গণহত্যার সাথে জড়িত কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ও মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন। অথচ তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বিপ্লবের মতো কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা পালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারে কোনো চেষ্টাই করেনি।
আশা করব, পলাতক পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতারে সরকার দ্রুত তৎপর হবে। সশস্ত্রবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। প্রয়োজনে এ কাজে তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পরিস্থিতি ঘোলা করতে সবরকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পুলিশের পলাতক সদস্যদের বিষয়ে সরকার কঠোর না হলে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement