২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন সমন্বয় কমিটি বাতিল

টিআইবির বিবৃতি উসকানিমূলক

-

জাতীয়-মানস গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে শিক্ষা। সঙ্গত কারণে বিশ্বের অগ্রসরমান প্রতিটি জাতি নিজ নিজ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করে। যাতে শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কর্মক্ষেত্রে অনন্য স্বাক্ষর রাখে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ৫৩ বছরেও এখনো আমরা একটি যুতসই শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারিনি। উল্টো দেশে বিদ্যমান বহুধা বিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জারি থাকায় মানুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বলয় তৈরি হয়েছে। একে অপরের মাঝে বিভেদের দেয়াল অলঙ্ঘনীয় হয়ে পড়েছে। পরিণামে জাতীয় ঐক্যের ভিত স্বাধীনতার এত বছর পরও খুব দুর্বল। লক্ষণীয়, দেশের সঙ্কটকালে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই এক কাতারে দাঁড়ানোর নজির খুব কম। তবে অনস্বীকার্য যে, মাফিয়া শাসক হাসিনার পতন আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী ছাড়া সবাই জুলাই-বিপ্লবের অংশীদার।
পতিত স্বৈরাচারের পতনে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু শেখ হাসিনা গত সাড়ে ১৫ বছরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেন। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুভার বর্তেছে। সরকার সময় নষ্ট না করে সংস্কারকাজে হাত দিয়েছে। শিক্ষা খাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিগত সরকারের বিতর্কিত শিক্ষাক্রমে প্রণীত পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তড়িঘড়ি করায় এতে কিছু অপূর্ণতা থেকে যায়। নানা পক্ষ থেকে গঠিত সমন্বয় কমিটি সংশোধনের দাবি ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন সমন্বয় কমিটি বাতিল করে। এরপর সবাই যখন আশা করছিলেন দ্রুততম সময়ে নতুন কমিটির ঘোষণা আসবে; ঠিক তখন দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কমিটি বাতিলের বিরোধিতা করে বিবৃতি দেন।
ওই বিবৃতি পাঠ করলে যে কারো কাছে স্পষ্ট হবে, বিবৃতিটি বিদ্বেষপূর্ণ। কোনো প্রতিবাদের ভাষা যে এমন অশোভন হতে পারে বিবৃতিটি পাঠ না করলে উপলব্ধিতে আসবে না। বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদের সাথে দৃঢ়ভাবে আপসের পথ পরিহারের আহ্বান জানানো হয়।
নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী হুমকির কাছে অন্তর্বর্তী সরকার আপস করে উদ্বেগজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি। বিবৃতিতে সমন্বয় কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈষম্যহীন ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিপন্থী ও অন্তর্বর্তী সরকারের আপসকামী আচরণের পরিচায়ক বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবির এমন বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, শিক্ষা বিষয়ে সংস্থাটি এমন প্রশ্ন করতে পারে কিনা? এটি এর কাজের আওতায় পড়ে কিনা? যেখানে দুর্নীতিবিরোধী কাজই যাদের মুখ্য। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন সমন্বয় কমিটি নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা জুলাই বিপ্লবের জোরালো অংশীদার। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে তারা সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছেন। অতএব বিদেশী অনুদানে চলা টিআইবির মতো সংগঠনের এমন বিবৃতি দেয়ার নৈতিক অধিকার আদৌ রয়েছে কিনা সে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। কারণ বিগত সাড়ে ১৫ বছরে হাসিনার দুর্নীতি নিয়ে সংস্থাটি কোনো কার্যকর প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়নি। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরোক্ষভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহযোগিতা করেছে এমন অভিযোগ করা হলে তা কি অবান্তর হবে?


আরো সংবাদ



premium cement