২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন

লক্ষ্য হোক সব অপরাধীর সুষ্ঠু বিচার

-

আইন আদালত তৈরি হয়েছে মানুষকে অপরাধ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য। এতে করে মানবসমাজে শৃঙ্খলা রক্ষা হচ্ছে। শক্তিমানেরা দুর্বলদের একেবারে উৎখাত করে দিতে পারছে না। তবে এই আইন ও আদালত নিজেই আবার হাতিয়ার হয়ে উঠছে স্বৈরাচারী গোষ্ঠীর ক্ষমতা রক্ষায়। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষ এমনই এক অমানবিক শাসনের মুখোমুখি হয়। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য জাতিকে বিভক্ত করে আইনকে অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করা হয়েছে।
একটি হাতিয়ার ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন। নামে এটি ‘আন্তর্জাতিক’ হলেও কাজের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ছিল জঘন্য। এর ব্যবহার হয়েছে বিরোধীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় অপরাধী সাব্যস্ত করতে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই আইনে বিগত ক্ষমতাসীনরা বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে এবার সত্যিকার অর্থেই মানবতাবিরোধী অপরাধের জ্বলন্ত প্রমাণাদি হাজির। শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এবং সারা দেশে তার দল আওয়ামী লীগ ও সমর্থক গোষ্ঠী এই জঘন্য অপরাধ করেছে।
সদ্য সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে নতুন করে আদালত গঠন ও আইন সংশোধন করা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল আইনের আটটি ধারা সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা জোর দিতে চাইছেন একটি সুষ্ঠু বিচারের প্রতি, যাতে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ নেয়ার ন্যূনতম অভিপ্রায় থাকবে না। এই আইনে জোর দেয়া হচ্ছে আসামিদের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণে। আদালতকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে এতে। বিদেশী আইনজীবী নিয়োগ দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে।
অথচ একই ট্রাইব্যুনালে এর আগে আমরা দেখেছি সম্পূর্ণ উল্টো চরিত্র। সেখানে আসামিদের ন্যূনতম অধিকারও রক্ষা করা হয়নি। জোর করে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে। একজন আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় একজন সাক্ষীকে বিচারাঙ্গন থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সুখরঞ্জন বালি নামের সেই ব্যক্তিকে অপহরণ করে ভারতে চালান করে দেয়া হয়। মাঠে আন্দোলন করার পর মামলার রায় পাল্টিয়ে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। এ জন্য উপস্থিত আইনেও পরিবর্তন করা হয়েছিল। পরে ফাঁস হলো স্কাইপ কেলেঙ্কারি তাতে প্রমাণ হয়ে গেল বিচারের নামে কিছু ব্যক্তিকে হত্যার আয়োজন চলছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে। ফাঁস হওয়া ফোন রেকর্ডে দেখা যায় আদালতে বিচারিক কার্যক্রম ছিল নাটকমাত্র। কার বিরুদ্ধে কী রায় দেয়া হবে সেটা নির্ধারণ করছে বাইরের লোকেরা। এমনকি বিদেশে বসে কেউ কেউ রায় ঠিক করে দিচ্ছিল। ব্রিটেনের এক আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের ওই ট্রাইব্যুনাল ছিল মূলত আদালতের মাধ্যমে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের আয়োজন। এ অবস্থায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক এর বিপরীত চরিত্রে ট্রাইব্যুনালকে দাঁড় করাতে চায়। মনে রাখতে হবে আসামিদের প্রাপ্য অধিকারের চেয়ে বেশি অধিকার দিতে গিয়ে যেন ন্যায়বিচার খর্ব না হয়।
নতুন আইনের খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, অপরাধ হতে পারে এটি জানা সত্ত্বেও যদি কোনো সংস্থা, সংগঠন, দল, সঙ্ঘবদ্ধ চক্র বা সত্তার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে তাকেও বিচারের আওতায় আনা যাবে। এতে করে যারাই মানবতাবিরোধী অপরাধে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিল তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে।
আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিবাদী চক্র দেড় হাজার মানুষ হত্যা করেছে। অন্ধ, খোঁড়া ও পঙ্গু হয়ে গেছে আরো ২২ হাজার মানুষ। যারা মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধে যুক্ত ছিল তাদের প্রত্যেককে যেন উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়, এ জন্য ট্রাইব্যুনাল এবং অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে দেশবাসী সেই প্রত্যাশা করে।


আরো সংবাদ



premium cement