২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ

জড়িতদের শাস্তি হতে হবে

-

পতিত হাসিনা সরকারকে মামলাবাজ সরকার বললে কম বলা হবে। বিরোধীদের দমনে তারা সন্ত্রাস, গুম খুনের পাশাপাশি মামলাকেও মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। গত বছরের শেষ নাগাদ বিএনপির বিরুদ্ধে এক লাখ ৩৮ হাজার মামলা করা হয়। জামায়াতসহ বিরোধী অন্যান্য দলের বিরুদ্ধেও দেয়া হয় হাজার হাজার মামলা। এসব মামলায় আসামি করা হয় প্রায় অর্ধকোটি মানুষকে। এমন গণহারে মামলার রেকর্ড অন্য কোনো দেশে নেই। মামলার কবলে পড়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আলেম ওলামাদের জীবন বিপন্ন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারে উদ্যোগী হয়েছে। জাতি আশা করে, যথাসম্ভব স্বল্পসময়ের মধ্যে এই পীড়ন থেকে ভুক্তভোগীরা রেহাই পাবে।
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে মন্ত্রণালয় ও জেলাপর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে সরকার। ভুক্তভোগীরা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করবেন। ৪৫ দিনের মধ্যে তারা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি সুপারিশ যাচাই-বাছাই করে মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেবে। দুর্নীতিসংক্রান্ত মামলা দুদকের সিদ্ধান্ত ছাড়া প্রত্যাহার করা যায় না। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুদকের সাথে সমন্বয় করা হবে যাতে আইনি জটিলতা না থাকে।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে হয়রানি মামলার কোনো নির্ধারিত সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি। মাফিয়া সরকার ২০০৯ সালে এই ঘৃণ্য মামলাবাজি শুরু করে। ক্রমান্বয়ে সেটি বেড়েছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমানোর লক্ষ্যে মামলা দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদ বিক্ষোভকারী জনতার বিরুদ্ধেও একইভাবে মামলা দেয়া হয়েছে। প্রথম দিকে নাশকতা ও জঙ্গি দমনের নামে মামলা দেয়া হয়েছে কোনো ধরনের বাছ-বিচার ছাড়া। তদন্ত প্রক্রিয়া অনুসরণের কোনো বালাই ছিল না। এরপর আসে গায়েবি ও আজগুবি মামলা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের লোকদের এক ধরনের বিশেষ অধিকার দেয়া হয়েছিল এমন মামলা করতে। তারা সেই বেআইনি শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজগুবি যেকোনো অভিযোগ এনে যার তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। মৃত মানুষ, বিদেশে থাকা ও কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের নির্বিচারে আসামি করা হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ককটেল নিক্ষেপ, সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি আক্রমণ করার মতো হাস্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচারকরাও এসব মামলার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছেন। নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে পীড়ন চালানোর সহযোগী হয়েছেন।
বিচার বিভাগ মানুষের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, তারা মাফিয়া গোষ্ঠীর সহযোগী হয়েছে। মিডিয়া ও নাগরিক সমাজও প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, বড়দাগে সরকারের পীড়নের পক্ষে বয়ান তৈরি করেছে।
নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো যাচাই-বাছাই করে দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক। তবে এই যাত্রায় বেআইনি গায়েবি মামলা, আজগুবি মামলা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার প্রশাসন ও সরকারি দলের যারা লাখ লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল, স্বৈরাচারের সেইসব সহযোগীকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। যে যতটুকু অপরাধ করেছে, তাকে ততটুকুর শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় দেশে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement