২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জলাবদ্ধতায় ৩০ হাজার একরে ফসলহানি

প্রতি বছর এত ক্ষতি আর মানা যায় না

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার বন্যাকবলিত বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা নিদারুণ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। কয়েক দিন বৃষ্টি না হলেও রাস্তাঘাট, বসতবাড়ির আঙিনা পানির নিচে। চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা তৈরি ও আবাদের সময় অতিক্রান্ত হতে চলেছে। পানিতে তলিয়ে থাকা বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার বীজ ও চারা সংগ্রহ করে কেউ কেউ আংশিক বপন করলেও তা পচে গেছে। মাসাধিককাল ধরে এ জলাবদ্ধতায় বেশির ভাগ কৃষকই আমন আবাদ করতে পারছেন না। উপজেলার চরকাদিরা, তোরাবগঞ্জ ও চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের ৩০ হাজার একর জমিতে মৌসুমের আমন আবাদ করতে পারছেন না। উপজেলার চরকাদিরা, তোরাবগঞ্জ ও চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের ৩০ হাজার একর জমিতে মৌসুমের আমন আবাদ করা যাচ্ছে না। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান কম হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ধান বপনের (বীজতলা তৈরি জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় এবং বপন শ্রাবণ-ভাদ্র) সময় প্রায় শেষের দিকে হলেও জমি তিন থেকে পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। বীজ এবং চারাসঙ্কটের কারণে চাইলেও আর আবাদ করা সম্ভব নয়।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রতি বছরই অতিবৃষ্টির কারণে এমন সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। এ অঞ্চলের চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকদের কাছে ভুলুয়া নদী মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এককালের খরস্রোতা ভুলুয়া নদী এখন প্রভাবশালী ও অসাধু জেলেদের কবলে পড়ে খালে পরিণত হয়েছে। অবৈধ দখল, মাছের ঘের তৈরি, নদীর দু’পাড় দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ জনবসতি এবং তলদেশ ভরাট হওয়ায় পানির স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ভুলুয়ার শাখা খালগুলোও দখলের পাশাপাশি বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়ে পড়ায় বর্ষার নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে আছে। নিরুপায় এলাকাবাসী স্থানীয় দখলদার প্রভাবশালী এবং প্রশাসনের কাছে একপ্রকার আত্মসমর্র্পণ করছেন।
ভুলুয়া নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পানি প্রবাহের গতিপথ স্বাভাবিক করতে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিবাদি করে সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান। অ্যাডভোকেট মিলন মণ্ডল বলেন, সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের রেশনিংয়ের ব্যবস্থা এবং বিনা সুদে কৃষিঋণ চালু করার দাবি করেছেন।
চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, তিনি প্রতি বছর ২৫ একর জমিতে ধান চাষ করেন। এ বছর এক শতক পরিমাণ জমিতেও আবাদ করা সম্ভব হয়নি। চরকাদিরা গ্রামের মোরশেদুর রহমান বলেন, তাদের ১৫ একর জমির সবটুকুই তিন ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
কমলনগর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীন রানা বলেন, অঞ্চলের কৃষিকাজের জন্য ভুলুয়া নদী আশীর্বাদ হলেও নদীর পানি প্রায় স্থবির, সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। আমন আবাদের জন্য কমলনগরের পাঁচ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাবে। পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে পানি কমলে এবং চাষিদেরকে চারা সরবরাহ করতে পারলে আরো কিছু জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা যাবে। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
প্রতি বছরই হাজার হাজার একর ধান নষ্ট হচ্ছে। অথচ এটা দেখাশোনার জন্য সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। তারাই মূলত দায়ী। অন্যথা কৃষকদের ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement