২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
একে একে পাহাড় ধসে পড়ছে

কোনো ব্যবস্থা নেই

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারে পাহাড় ধসে একেকটি মর্মান্তিক পরিণতির পরও প্রশাসনের কোনো টনক নড়ছে না। পাহাড় থেকে সরে যেতে শুধু মাইকিং করেই দায়িত্ব সারা হচ্ছে। বাস্তবসম্মত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অথচ পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা চূড়ায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে এখনো বসবাস করছেন তিন লক্ষাধিক মানুষ।

গত এক যুগে পাহাড়ধসে নিহত হয়েছেন ৩৪০ জন মানুষ। সরকারি বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়হীনতায় থামানো যাচ্ছে না পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। পাহাড়ের জমির দখল ও বেআইনিভাবে বেচাকেনা হচ্ছে নিয়মিতই। এটি ফৌজদারি অপরাধ জেনেও নোটারি পাবলিকরা বেচাকেনার এসব কাগজপত্র সই করে দিচ্ছেন। এ কারণে বন বিভাগের এবং জেলা প্রশাসনের শত শত একর খাসজমি বেহাত হচ্ছে।

এভাবে কক্সবাজারের মোট বনভ‚মির এক-তৃতীয়াংশের বেশি বেদখল হয়ে গেছে। এর বাইরে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে চার হাজার ৮৫৮ হেক্টর পাহাড়ী জমিতে। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা। চলতি বর্ষার আগে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে সমতলভ‚মিতে আনা হয়নি। রোহিঙ্গাদের বাদ দিলে এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, চিহ্নিত অপরাধী, এমনকি আরো প্রায় ৫০ হাজার পুরাতন ও নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পাহাড় দখল করে বসতি গড়ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান মতে, বিগত এক যুগে পাহাড় ধসে ৩৪০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড়ধস হয় ২০১০ সালের ১৫ জুন। এদিন রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ছয় সেনা সদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে প্রায় ৬২ জন প্রাণ হারান।

এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মারা যায় ২৮ জন। এবার বর্ষার শুরুতে গত ১৯ জুন ভোরে ৯, ১০, ৮ ও ১৪ নম্বর ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত হয় ১১ জন। এ ছাড়াও আরো কিছু পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে, যার কোনো তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে।

কক্সবাজার জেলায় মোট বনভ‚মির পরিমাণ ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৯ হাজার ৬৫৭ হেক্টর। এসব জমি দখল করে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। পাহাড়ি জমিতে বসবাস করছে ১৯ হাজার ৮২৬টি পরিবারের তিন লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে, যা জেলায় মোট জনসংখ্যা ২৭ লাখ।

কক্সবাজারের পরিবেশকর্মী মোহাম্মদ উর রহমান মাসুদ বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরে ছয়টি ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করছে। তাদের সরিয়ে আনাটা এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব বিভীষণ কান্তি দাস জানান, পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসন নিরলস কাজ করছে। কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, কক্সবাজারের পাহাড় সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করলে প্রতি বছর এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement