২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
তৈরী পোশাক শিল্পে অস্থিরতা

নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

-

গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা, গাজীপুর, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। ঢাকার উপকণ্ঠে সাভার, আশুলিয়া ও জিরানির পোশাক কারখানাগুলো ২০ দিন ধরে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের প্রধান শিকারে পরিণত হয়েছে।

কিছু দিন বন্ধ থাকার পর গত পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার আশপাশের তৈরি পোশাক কারখানায় নতুন করে শুরু হয়েছে শ্রমিক আন্দোলন। বিভিন্ন দাবি আদায়ে কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতা ও ক্ষতি এড়াতে কিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত দু’দিন পরিস্থিতি তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকায় বন্ধ কারখানাগুলো ফের চালু করা হয়। কিন্তু গত বুধবার আবার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

এসব কারখানার মালিকরা পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী। তারা গায়ের জোরে গত তিন বছর নিজেদের কারখানায় মজুরি বাড়ানো স্থগিত রাখেন, ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মীদের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। মাতৃত্ব ও অর্জিত ছুটি প্রদান করতে গড়িমশি করেন। এসব পুঞ্জীভ‚ত সমস্যাও পোশাক খাতের বর্তমান অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী।

সংবাদমাধমের খবর অনুযায়ী, পতিত হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী মালিক ও শ্রমিক নেতাকর্মীরা পোশাক কারখানায় অস্থিরতা ছড়িয়ে দিতে ষড়যন্ত্র করছেন। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর কিছু মালিক নিজেদের কারখানার কিছু অসাধু শ্রমিক কর্মচারী দিয়ে অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া উত্থাপনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এর পেছনে পোশাক খাত নিয়ে দেশী-বিদেশী চক্রের গভীর ষড়যন্ত্র আছে। ফলে তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা কাটছে না। পানি ঘোলা করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চলছে। দ্রæত শক্ত হাতে এদের প্রতিহত করতে না পারলে দেশের পোশাক শিল্প বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত শনিবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) আশুলিয়ায় কারখানাগুলোর চলমান সঙ্কট ও উত্তরণ নিয়ে মতবিনিময় হয়। এতে শ্রমিক অসন্তোষে তিনটি কারণ দায়ী বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়। এগুলি হলো- বহিরাগতদের আক্রমণ-ভাঙচুর, শ্রমিকদের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দাবির সমন্বয়ে অস্থিরতা এবং ঝুট ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। শিল্প পুলিশের ভাষ্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে একটি চক্র অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নয়া দিগন্তকে বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের জেরে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিদেশী ক্রেতাদের শীত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ কমছে। রফতানি আদেশ যাতে অন্য দেশে চলে যায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টে হামলা, ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প বাঁচাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মালিকদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিক নেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।

একই সাথে শ্রমিকদের যেকোনো ন্যায্য দাবি সরকার-শ্রমিক-মালিকপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে।

আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, এটি সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন নয়।

তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, অবিলম্বে তা প্রশমন হওয়া দরকার। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান চালানো যেতে পারে। না হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে পোশাক শিল্প।


আরো সংবাদ



premium cement