১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পেনশন স্কিম প্রত্যয়-এর প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা

- ছবি : সংগৃহীত

সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয়-এর প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের জনংসযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’-এর স্কিম যাত্রা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনয়নের লক্ষ্যে অন্যান্যের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এ স্কিম প্রবর্তন করা হয়।

প্রত্যয় স্কিম সম্পর্কে কিছু বিষয়ে অধিকতর স্পষ্টীকরণে বলা হয়, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত যে সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন তারা পূর্বের ন্যায় সকল পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

দ্বিতীয়ত
বর্তমানে সরকারি পেনশনে Unfunded Defined Benefit সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ফলে পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রদত্ত বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়। ১ জুলাই থেকে Funded Defined Contributory সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে বিধায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূলবেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা, যা কম হয় তাহা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কর্তন করবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। এরপর উভয় অর্থ উক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

তৃতীয়ত
Unfunded Defined Benefit সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে কোনক্রমেই টেকসই ব্যবস্থা নয়। অপরদিকে Funded Contributoryপেনশন সিস্টেমে প্রাপ্ত কন্ট্রিবিউশন এবং বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে বিধায় এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০০৪ সাল থেকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে।

চতুর্থ
নতুন পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হবে। এতে Financial Inclusion এবং Inclusive Development নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

পঞ্চম
কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের পর নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে, তিনি সার্ভিস প্রোটেকশন ও পে প্রোটেকশন প্রাপ্ত হন বিধায় এটিকে নতুন নিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয় না। সেক্ষেত্রে তার বিদ্যমান পেনশন সুবিধার আওতায় থাকার সুযোগ থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী, যারা ২০২৪ সালের ১ জুলাই ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, কেবলমাত্র তারা প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

ষষ্ঠ
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন প্রাপ্তির উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ৬৫ বছর থেকে অবসরে যাবেন বিধায় ৬৫ বছর থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে।

সপ্তম
লাম্পগ্র্যান্ট, পিআরএল ও প্রভিডেন্ট ফান্ড বর্তমান ব্যবস্থায় বহাল থাকবে।

অষ্টম
কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এককালীন নয়, বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসংগত পরিমাণ নির্ধারণ করাই অগ্রগণ্য বিধায় এক্ষেত্রে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি, বরং বিদ্যমান মাসিক পেনশনের কয়েকগুণ বেশি মাসিক পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে মাসিক ৫ (পাঁচ) টাকা বেতন থেকে কর্তন করা হলে, একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান জমা প্রদান করলে ৩০ বছর পর, একজন পেনশনার প্রতি মাসে এক লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তার নিজ আয়ের মোট জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা এবং তিনি যদি ১৫ বছর ধরে পেনশন পান সেক্ষেত্রে তার মোট প্রাপ্তি হবে দুই কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা, যা তার জমার প্রায় ১২ দশমিক ৫ গুণ। পেনশনার পেনশনের যাওয়ার পর ৩০ বছর জীবিত থাকলে, তার জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন।

নবম
বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনার আজীবন পেনশন পান। তার অবর্তমানে পেনশনারের স্পাউজ এবং প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পান। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন। পেনশনারের অবর্তমানে তার স্পাউজ বা নমিনি পেনশনারের পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসেবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে, সে পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন। উদাহরণস্বরুপ, একজন পেনশনার অবসরে যাওয়ার পর পেনশন ভোগরত অবস্থায় পাঁচ বছর পেনশন পেয়ে, তারপর মারা গেলেন। এক্ষেত্রে তার স্পাউজ বা নমিনি আরো ১০ বছর পেনশন পাবেন।

বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডে (সিপিএফ) আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, কোনো পেনশন পান না। তাছাড়া সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতা বহির্ভূত থাকায়, সরকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে একটি সুগঠিত পেনশন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রবর্তন করেছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, দেশের সকল মানুষের জন্য পেনশন স্কিম প্রবর্তনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement