০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫
`

নগদ সহায়তা কমল, রফতানিতে ধাক্কার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশ ব্যাংক - প্রতীকী ছবি

নতুন অর্থবছরে সব ধরনের রফতানিতে নগদ সহায়তা আরো কমিয়েছে সরকার। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৈরি পোশাক ও চামড়াসহ ৪৩ খাতের পণ্যে নগদ প্রণোদনা কমানো হয়েছে। পণ্য ভেদে কমেছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে রফতানিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগার শঙ্কা রয়েছে।

রোববার (৩০ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে জাহাজীকৃত রফতানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র–ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা হবে দেড় শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে যা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্রখাতের রফতানিকারকদের প্রণোদনার হার দেড় শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তাও আরো কমিয়ে শুন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এই হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়। নীট, ওভেন ও সোয়েটারসহ তৈরি পোশাক খাতের সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অতিরিক্ত নগদ সহায়তা হবে ৩ শতাংশ। আগে যা ৪ শতাংশ ছিল। বস্ত্র খাতে নতুন পণ্য বা নতুন বাজার সম্প্রসারণ সুবিধা আবার কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে যা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয় ৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা দেয়া হবে শুন্য দশমিক শুন্য ৩ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে যা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শুন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়।

চামড়ায় ভর্তুকী আরো কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভর্তুকী ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছিল। সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে অবস্থিত কারখানা এবং সাভারের বাইরে নিজস্ব ইটিপি রয়েছে এরকম কারখানা উৎপাদিত ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে রপ্তানি ভর্তুকী দেয় সরকার। এছাড়া অন্যান্য সব খাতে ভর্তুকী কমানো হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে সঙ্কটে ডলারের খরচ কমাতে চাইছে সরকার। অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ সহায়তা কমানো হয়েছে।

নগদ সহায়তা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরাবরের মতো চলতি অর্থবছরের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে নগদ সহায়তা পরিশোধ বিষয়ে এ সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এবার প্রায় সব পণ্যের নগদ সহায়তার হার কমানো হয়েছে।

রফতানি সহায়তা কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে রফতানি খাত নানা সমস্যায় জর্জরিত। আর এখন নগদ সহায়তা কমিয়ে দেয়াটা যুক্তিসংগত নয়। নগদ সহায়তা কমিয়ে দেয়ার ফলে আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাবে, রিজার্ভ কমে যাবে। আস্তে আস্তে পরনির্ভরশীল হয়ে যাব।

তিনি বলেন, আমাদের একদিকে কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং ব্যাংক সুদ বেড়েছে। অন্যদিকে সহায়তা কমানো হচ্ছে। তাতে ধীরে ধীরে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হবে এ খাত। তাতে ঋণের অর্থ ব্যাংক ফেরত পাবে না। এভাবে রফতানিকারকদের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নষ্ট হয়ে যাবে।

এলডিসির অযুহাত ঠিক নয় জানিয়ে পোশাক কারখানার মালিকদের এ নেতা বলেন, উন্নয়নশীল দেশে গেলে আমাদের সুবিধা কমে যাবে এই অযুহাত দিয়ে নগদ সহায়তা কমানোর কোনো যুক্তি নেই। কারণ আরো দুই বছর সময় আছে, এছাড়া এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পর আরো ৩ বছর শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এখনই সব বন্ধ করে দেয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

আমরা সরকারের সব মহলে বিষয়টি জানিয়েছি কিন্তু তারা আমলে না নিয়ে সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। তৈরি পোশাক খাত এখন আইসিইউতে আছে। সঠিক চিকিৎসা দেয়া না হলে লাইফ সাপোর্টে দিতে হবে। তা না দিয়ে নগদ সহায়তা কমানোর মাধ্যমে গলা টিপে হত্যা করার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বিকেএমইএর এ নেতা।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে সব পণ্যে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement