১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশে ইলেক্ট্রিক গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি ও চার্জিং স্টেশনকে প্রাধান্য দেয়া হয় নাই : BEMA

বাংলাদেশে ইলেক্ট্রিক গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি ও চার্জিং স্টেশনকে প্রাধান্য দেয়া হয় নাই : BEMA - ছবি: সংগৃহীত

মাননীয় অর্থমন্ত্রী বগত ছয় জুন তারিখে মহান জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। বর্তমান অর্থনীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনীতি গতি পুনরূদ্ধারে যা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

এবারের বাজেট প্রতিপাদ্য বিষয় ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে অন্যতম উপাদান হল স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা। স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আশা ছিল স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম উপাদান ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প বিকাশে প্রয়োজনীয় সহায়তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে যা প্রতিফলিত হয়নি। যা এই শিল্পের প্রসারকে এবং মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারেটি প্ল্যান ২০৩০-এ গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যে চলমান ইলেকট্রিক ভেহিকেল উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনাকেও বাঁধাগ্রস্থ করবে। আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প উন্নয়নে বৎসরভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিনিয়োগের শর্তসাপেক্ষে আগামী ২ বছর সিবিউ অবস্থায় ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক মওকুফ করনসহ সর্বনিম্ন কাষ্টমস ডিউটি নির্ধারণ এবং পরবর্তী ১০ বছর ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ন্যায় ইলেকট্রিক গাড়ির প্রোগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ওপর ভিত্তি করে কর কাঠামো নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি এবং নতুন ইলেকট্রিক ভেহিকেল রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স মওকুফসহ প্রতিবছর গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন প্রদানের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স মওকুফের প্রস্তাব করছি। এছাড়া ইলেকট্রিক ভেহিকেলে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী ও চার্জিং স্টেশন স্থাপনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর সর্বনিম্ন হারে আমদানি শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। ইলেকট্রিক মোটর শিল্প বিকাশে এই শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানিতে রেয়াতী সুবিধা প্রদান করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ুসহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুর নানিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এনটিইউ) গবেষণা তথ্যমতে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন গ্যাস নির্গমণ আর দাবানলের মতো উৎস থেকে বায়ুদূষণের কারণে ১৯৮০-২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় সাড়ে তেরো (১৩ দশমিক ৫) কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। বায়ুদূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিক্ষর গ্রিনহাউজ গ্যাস তথা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ বৃদ্ধিকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী খাতগুলোর মধ্যে পরিবহন সেক্টরকে দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী খাত হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বাংলাদেশে তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী খাত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় প্রণীত রূপকল্প-২০৪১-এর আলোকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতিসমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবহন খাত থেকে গ্রহণযোগ্য মাত্রা (Business-as-Usual ev BAU)- এর চেয়ে শর্তহীনভাবে ৩ দশমিক ৩৯ মেট্রিক টন (৩ দশমকি ৩৯ MICO₂e) এবং শর্তযুক্তভাবে (বৈদেশিক সাহায্যে) ৬ দশমকি ৩৩ মেট্রিক টন (৬ দশমকি ৩৩ MICO:e) কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর অঙ্গিকার করেছে [Nationally Determined Contributions (NDC) of Bangladesh]। মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারেটি প্ল্যান ২০৩০ অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রচলিত যানবাহনের ৩০ ভাগ ইলেকট্রিক ভেহিকেলে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে একটি যথোপযুক্ত ইলেকট্রিক ভেহিকেল পলিসি যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বায়ুদূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ রোধে পৃথিবীর উন্নয়নশীল ও উন্নত রাষ্ট্রগুলো ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ব্যবহারের ওপর অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ইলেকট্রিক ভেহিকেলের দ্রুত প্রসারে এই শিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবহারকারীগণকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছে। যেমন : পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সিবিউ অবস্থায় ইলেকট্রিক ভেহিকেল আমদানির ওপর বিনিয়োগের শর্তসাপেক্ষে আমদানি শুল্ক ১৫ ভাগ নির্ধারণ, আয়কর আইনের ৮০ ইইবি ধারার আওতায় প্রথমবার ইলেকট্রিক ভেহিকেল ক্রয়ের জন্য গৃহীত ঋণের মোট ১ দশমিক ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত কর সুবিধা প্রদানসহ বিনামুল্যে ইন্সুরেন্স ও রেজিস্ট্রেশন, সকল ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ওপর GST সুবিধা প্রদান, মূল্যের ওপর ৪০ ভাগ পর্যন্ত প্রণোদনা প্রদান করেছে। অনুরূপভাবে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন ইলেকট্রিক ভেহিকেল প্রসারে কর ছাড়সহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করেছে। যেমন : রেজিস্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্স, পার্কিং ফি, টোল, আমদানি কর মওকুফ, নিম্ন হারে লোন সুবিধাসহ মূল্যের ওপর নগদ সুবিধা প্রদান করেছে।

ইলেকট্রিক ভেহিকেল একটি প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প। এই শিল্প উন্নয়নে অতি দ্রুত কার্যকরী দিক নির্দেশনা প্রদান করা হলে আগামী দিনে বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থানের কারনে ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্পের হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। অটোমোবাইলের মতো প্রযুক্তি নির্ভর ভারী শিল্প গড়ে তুলতে সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা ছাড়া শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় দেশে আজ মোটরসাইকেল শিল্পে দেশী-বিদেশী প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং দুই লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় দেশে আজ গাড়ি সংযোজন শিল্প গড়ে উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি সহায়তায় বেশ কিছু ব্র্যান্ড এদেশে গাড়ি উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করেছে। ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্পের উন্নয়নে সরকারের নীতি সহায়তা প্রদান করা হলে আমদানি নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পে অগ্রসর হবে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement