খামারিদের পাশে নেই প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, ঘুষ ছাড়া মিলে না সেবা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ জুন ২০২৪, ১৪:২৮
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহা-পরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক খামারিদের খামারের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তিনি খামারিদের কোনো সহযোগিতা করছেন না। তার কার্যক্রমে বোঝাচ্ছেন দেশের দুধ উৎপাদনে তাদের ডাক্তার ও মিল্ক প্রসেসিং কোম্পানিগুলোই সব কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।
শনিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। কোরবানিতে চোরাইপথে গরু আসা বন্ধ, রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা ও গুড়া দুধের শুল্ক বাড়ানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আযোজন করা হয়।
সিরডাপ মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উপলক্ষে ডেইরি আইকন প্রদান অনুষ্ঠান চলছিল। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান। সরকারে খাত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কর্সমসূচি চলাকালে ডেইরি খাতের এই সংবাদ সম্মেলন ওই কর্মসূচিকে বয়কটের অংশ কি-না জানতে চাইলে ইমরান হোসেন তা অস্বীকার করেন।
এ সময় ইমরান হোসেন বলেন, আগে ডাক্তাররা মোটরসাইকেলে আসতো তাদের ৫০০ টাকা দিলেই হতো। বর্তমানে ১০০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এসব ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
বিডিএফএয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী আজম শিবলী, সহ-সভাপতি একেএম নাজিব উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মো: শাহ ইমরান প্রমুখ উপস্থিত।
জামাল হোসেন নামে এক খামারি বলেন, ‘আমি ডিজির সাথে দেখা করতে গেলে তিন দিন পরে দেখা করার জন্য সময় দেন।’
রাশেদা বেগম নামের আরেক খামারি বলেন, ‘আমার ২০টি গাভী ছিল অসুস্থ হয়ে তার মধ্যে ১৫টি মারা গেছে। যখন গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ডাক্তারদের ফোন দিলে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি জানায়। বাধ্য হয়ে আট হাজার টাকা দেয়া হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডাক্তারের সামনেই দু’টি গাভী মারা গেছে। কী রোগ হয়েছিল তা জানতে তারা পরীক্ষার জন্য আলামত নিলেও এখনো রিপোর্ট দেয়নি। আমি এখন নি:স্ব।’
গুড়ো দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে এক কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন দুধের প্রয়োজন।
তবে, উৎপাদন হচ্ছে এক কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার টন। পুষ্টির চাহিদা দেশের দুগ্ধ খামারের মাধ্যমেই সম্ভব। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকলেও বেশ কিছু বাধার কারণে দুধের উৎপাদন বাড়ছে না। এসব বাধা দূর করলে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আমরা মনে করি, দুধ উৎপাদনের প্রধান বাধা আমদানিকৃত দুধ। আমদানি করা গুঁড়ো দুধ আমাদের সাংঘাতিকভাবে ক্ষতি করছে। এসব দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি বস্তা আকারে বাল্ক ফিল্ড মিল্ক নামক গুড়া দুধ এনে নতুন মোড়কে বাজারজাত করে জনগণের সাথে প্রতারণা ঘটনা ঘটে। গুঁড়ো দুধ আমদানির মাধ্যমে দেশের দুগ্ধ শিল্প এক ধরনের বাধার মুখে পড়েছে।
ইমরান হোসেন বলেন, গুঁড়ো দুধ আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করে সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুই বছরের মধ্যে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে বাংলাদেশ। আমদানিতে অধিক হারে শুষ্কারোপ করে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে তুলতে হবে। মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে খামারিদের উৎপাদিত তরল দুধ সংগ্রহ করে দেশেই গুড়া দুধ তৈরী করতে পারলে বিদেশ থেকে গুড়া দুধ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হবে, দেশীয় শিল্প রক্ষা হবে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। নানা অজুহাতে বিদেশ থেকে ব্লাক ফিল্ড নামের গুড়া দুধ আমদানি বাংলাদেশের দুগ্ধ খামার শিল্পের জন্য হুমকিস্বরুপ।
তিনি আরো বলেন, শিশুখাদ্যের নামে বান্ধ ফিন্ড মিল্ক নামক গুড়া দুধ আমদানি কখনই পুষ্টির যোগান নিশ্চিত করতে পারে না। শিশুখাদ্য সেরেলেক বাংলাদেশে তৈরী হয় না।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন শিশুখাদ্য নয়, বান্ধ ফিল্ড মিল্ক আমদানির বিপরীতে শুল্ক বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে আরো বেগবান করার আহাবান জানাচ্ছি। আর ফর্মুলা দুধের শুল্ক শূন্য করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার দাবি জানিয়ে ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে বড় ক্ষত তৈরি করেছে। বিশেষ করে কোরবানির হাটের উদ্দেশ্যে যারা গবাদি পশু লালন করেছে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। দুর্গত অনেক এলাকায় পশুর প্রয়োজনীয় খাবার নেই। অনাহারে কিংবা পচা খাদ্য খেয়ে অনেক পশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মারাও পড়ছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না সবুজ ঘাস। ১৯ জেলায় ১০৭টি উপজেলায় গবাদি পশু ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। কমপক্ষে ২৫ লাখ গবাদি পশু ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃত্যুর খবর আসছে। প্লাবিত হয়েছে গবাদি পশুর নয় হাজার ৭৫৯ একর চারণভূমি। ফলে প্রাকৃতিক খাবারের বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এ মুহূর্তে চিকিৎসা, গরুর ঘর তৈরি করে দেয়া ও আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন। খামারিদের ব্যাংক ঋণ মওকুফ করতে হবে। সহজ শর্ত ও সুদবিহীন কৃষিঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। খামারিদের ক্ষতি নিরূপণ করতে হবে দ্রুত। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনতে হবে এবং গবাদি পশুর জন্য ঘাসের বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
চোরাইপথে গরু আসছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখান থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদি পশুর লালন-পালন বেড়ে যায়। আর সেটাই বাংলাদেশকে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। একদিকে কয়েক বছর ধরে গবাদি পশু আমদানি বন্ধ, অন্যদিকে কোরবানির ঈদে প্রতি বছর উদ্বৃত্ত থাকে ২০ লাখের বেশি পশু। এবারো চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত আছে।
তবুও ঈদুল আজহা সামনে রেখে নানা কৌশলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত গলিয়ে ঢুকছে গরু-মহিষ। কিছু সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে অন্য বছরের চেয়ে বেশি পশু ঢুকছে এবার। কখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, আবার কখনো প্রশাসনের সাথে যোগসাজশে আনা হচ্ছে গরু। চোরাইপথে আসা এসব পশু বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে, রীতিমতো সীমান্ত এলাকায় হাট বসিয়ে। এসব হাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে পশু। কোরবানি উপলক্ষে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসবে না-সরকারের এমন ঘোষণায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন দেশী খামারিরা। এখন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরু ঢোকায় লোকসানের শঙ্কায় নিরাশ তারা। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত পথে গরু আসা বন্ধে কঠিন নজরদারি করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা