পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির পর কেমন চলছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৪ মে ২০২৪, ১০:২৪
বাংলাদেশের নন ব্যাংকিং আর্থিক খাতে প্রশান্ত কুমার হালদার বা পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনার পরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কমপক্ষে চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি।
আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পেরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অবসায়নেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু পরে আদালতের নির্দেশে আবারো পুনরুজ্জীবিত করা হয় এসব প্রতিষ্ঠান।
সেই ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর কেমন চলছে ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক খাতের এসব প্রতিষ্ঠান?
যে আমানতকারীদের আবেদনে আদালত এসব প্রতিষ্ঠান পুনরায় কার্যকরের আদেশ দিয়েছে, তারা এখনো নিজের জমানো অর্থ পুরোপুরি ফেরত পাননি বলে অভিযোগ করছেন।
আর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হচ্ছে। যাদের আমানতের সীমা পাঁচ লাখ টাকা তাদের পুরোপুরি অর্থ দেয়া হচ্ছে। বাকিদের আমানতের ১০ শতাংশ হারে দেয়া হচ্ছে। ফলে এই সীমার বাইরে আমানতকারীদের পুরো অর্থ ফেরত পাওয়া এখনো অনিশ্চিত ও সময়সাপেক্ষ বিষয়।
যে আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনায় আসে এসব প্রতিষ্ঠান
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য দেশের নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতে সবচেয়ে আলোচিত নাম প্রশান্ত কুমার হালদার বা পিকে হালদার।
২০০৯ সালে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এই পি কে হালদার। পরে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি হন। দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের একজন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে শেয়ার কিনে দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন প্রশান্ত কুমার হালদার। সেজন্য এসব প্রতিষ্ঠানে নিজের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের পরিচালনা পর্ষদে বসান।
এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি বা বিআইএফসি, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
পরে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করার অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে কয়েক হাজার গ্রাহক এখনও তা ফেরত পায়নি।
কিন্তু এসব দুর্নীতি ঘটার সময় বাংলাদেশের আর্থিক খাতের তদারকি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।
২০২০ সালের শুরুতে পি কে হালদারের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ পায়।
সে সময় তাকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হাইকোর্ট আদেশও দেয়। একইসাথে তার মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
এ বছরের নভেম্বরে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ছয় হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে পি কে হালদারসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছিল দুদক।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে তাকে ধরার জন্য পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের মে মাসে তিনি ভারতে গ্রেফতার হন।
ভারতেরই একটি আদালতে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ভারতের কারাগারে সাজা খাটছেন তিনি।
তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের মোট ৫২টি মামলা রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ এলেও পাচারের অঙ্ক আরো বেশি বলে সে সময় দাবি করেছিলেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।
পিপলস লিজিংয়ে দুর্যোগ
যেসব প্রতিষ্ঠানে পি কে হালদারের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, তার একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড।
আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় ২০১৯ সালে এটিকে অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
কার্যক্রম শুরুর ২২ বছরের মধ্যে এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
ফলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলে গ্রাহকদের দায়দেনা শোধ করতে দীর্ঘমেয়াদি স্কিম গঠনের সিদ্ধান্তও হয়। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় একজন অবসায়ক নিয়োগ করা হয়।
১৯৯৭ সালে এ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম প্রদান করে আসছিল। প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
২০১৪ সালে থেকে এ প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন পরিচালক অবৈধভাবে ঋণ নেয়ার পর পরের বছরই তাদের অপসারণ করা হয়।
অভিযোগ আছে, ২০১৫ সাল থেকেই পি কে হালদারের পরিচিত ব্যক্তিরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনে মালিকানা পান। আগের সঙ্কটসহ ২০১৫ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে লোকসান গুনতে থাকে।
অবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরে কয়েকজন আমানতকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠানটি পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দেয়। বোর্ডও গঠন করে দেয়া হয়।
একইসাথে নতুন বোর্ড প্রতিষ্ঠানটির ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ও যোগ্য বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করে তাদের হাতে প্রতিষ্ঠানটির ভার হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর বেশ কয়েকবার বোর্ড পুনর্গঠন হলেও সে অনুযায়ী এখন চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
আমানতকারীদের যেসব অভিযোগ
নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের এসব প্রতিষ্ঠানে যারা আমানত রেখেছিলেন, ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানগুলো ডুবতে বসার সংবাদ আলোচনায় এলে টাকা ফেরত চেয়ে আন্দোলনে নামে আমানতকারীরা। পরে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়।
পিপলস লিজিংয়ে প্রায় ছয় হাজারের ওপরে আমানতকারী রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ের আমানতকারীদের সাড়ে সাত শ’ কোটি টাকা আমানত রয়েছে।
২০১৮ সালের নভেম্বরে সামিয়া বিনতে মাহবুব ও তার স্বামী পিপলস লিজিং এ প্রায় এক কোটি টাকার বেশি অর্থ ছয় মাসের জন্য আমানত রাখেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘একটা জমি কিনব বলে ছয় মাসের জন্য দুই জনের সব সঞ্চয় ডিপোজিট করি। সেই ছয় মাস এখন ছয় বছর হয়ে গেছে। শুধুমাত্র চিকিৎসা সংক্রান্ত আবেদন করার কারণে একবার পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছি। তবে, কোনো ইন্টারেস্ট দেয়া হয়নি। কবে নাগাদ পুরো অর্থ পাওয়া যাবে সেটাও অনিশ্চিত।’
২০২১ যখন আদালতের বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছিল, সেই বোর্ডে আমানতকারীদের মধ্য থেকে একজন প্রতিনিধি রাখা হয়। সঙ্গীতশিল্পী নাশিদ কামাল ছিলেন এই বোর্ডে।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমার নিজের ৫০ লাখ টাকা ডিপোজিট ছিল। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছি।’
এখন তিনি পিপলস লিজিং এর বোর্ডে নেই। তবে, সে সময়ের অভিজ্ঞতায় নাশিদ কামাল জানান, ‘এমন অনেকে আছেন যাদের সর্বস্ব তারা আমানত রেখেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে আমানতের অর্থ ফেরত না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবন যাপন করছেন।’
জানা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গীত শিল্পী মুস্তফা জামান আব্বাসীর পরিবারের প্রায় চার কোটি টাকা পিপলস লিজিং এ আমানত রাখা হয়। কিন্তু এখনো ফেরত পাননি এ আমানত।
নাশিদ কামাল জানান, বর্তমানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। বেশ কয়েকবার স্ট্রোক করেছেন। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
আমানতকারীদের বিষয়ে যা বলছে প্রতিষ্ঠানটি
বর্তমানে পিপলস লিজিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন সগির হোসেন খান। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সিনিয়র সিটিজেন, চিকিৎসা, মুক্তিযোদ্ধাসহ চার ক্যাটাগরিতে তারা আমানতকারীদের কিস্তি দিচ্ছেন। ২০২১ সালে হাইকোর্টের নির্দেশের পরই প্রথম কিস্তিতে টাকা দেয়া হয়। এখন দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।’
এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার ৬৪০ জন আমানতকারীকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আমানতকারীদের ইন্টারেস্ট না দেয়ার ব্যাপারে সগির হোসেন খান বলেন, ‘আমানতকারীদের ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইন্টারেস্ট দেয়া হয়েছে। যাদের পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত রয়েছে তাদের পুরো অর্থ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তবে কবে নাগাদ আমানতকারীরা পুরো অর্থ পাবে সেটি এখনো অনিশ্চিত। তিনি বলেন, ‘আমানতকারীদের পুরো অর্থ পরিশোধে লম্বা সময় লাগবে।’
যেভাবে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি বা বিআইএফসি এখন পরিচালিত হচ্ছে আদালত গঠিত পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে।
এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত পর্ষদের মাধ্যমে।
পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির পর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থা কাটছেই না।
গত বছরের সেপ্টেম্বর-ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিং এর এক হাজার ৯৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে।
তবে প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর শেয়ার বাজারে আবারো লেনদেন শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে নতুন করে প্রতিষ্ঠানটি হোম লোন, অটো লোন এবং এসএমই লোন দেয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সগির হোসেন খান।
এছাড়া যারা প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি সেসব ঋণ পুনরুদ্ধারে অর্থঋণ আদালতে ও চেক ডিজনারের প্রায় দুই শ’র বেশি মামলা করা হয়েছে।
এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সাত শ’ কোটি টাকা চেয়ে আবেদন করা করেছিল এই কোম্পানি।
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সগির হোসেন খান বলেন, ‘বড় বড় ডিপোজিটরদের অ্যামাউন্ট ইকুইটিতে রূপান্তর করতে চাচ্ছি। অর্থাৎ কারো যদি পাঁচ কোটি টাকা ডিপোজিট থাকে সে পুরো টাকার শেয়ার কিনে প্রতিষ্ঠানের মালিক হলে অর্থ ফেরত দিতে হবে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিআইএফসির খেলাপির হার ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। খেলাপি ঋণ ৭৪৩ কোটি টাকা।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৯১২ কোটি টাকা বা ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২৫ কোটি টাকার মতো আদায় করেছে। এর মধ্যে ২০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারীদের ফেরত দেয়া হয়েছে। টাকা উদ্ধারে মামলা করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
এফএএস ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা এক হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরাও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
আইনেও পরিবর্তন
নন-ব্যাংকিং খাতের এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক আর্থিক কেলেঙ্কারির পর এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার এ খাতের আইনেও পরিবর্তন এনেছে।
গত বছরের নভেম্বরে সংশোধিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনে নতুন বিধান যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিবর্তিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো একক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি আমানত নিতে পারবে না দেশের কোনো ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং কোম্পানি। একইসাথে যৌথ নামে কোনো ব্যক্তি এরকম আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রাখতে পারবেন না।
এছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনো ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্য ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মিলে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না। পাশাপাশি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারের মালিক হতে পারবে না।
যা বলছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক খাতের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংক- বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে, বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক কেলেঙ্কারির যে অভিযোগ উঠেছে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি, নিয়ন্ত্রণের অভাবকেই দায়ী করেছেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এখন আদালতের নিয়োগ করা বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধারে যেসব প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হয় সে সব ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে। তারা লোনগুলো পুনরুদ্ধারেও আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
‘যেহেতু ফিন্যান্সিয়াল ডিফিকাল্টিস আছে, নতুন করে প্রতিষ্ঠানগুলো আবার কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত ধরনের সহায়তা দেয়া যায় তা করছে। যে ধরনের গাইডেন্স দেয়ার কথা তা দেয়া হচ্ছে,’ বলেন মেজবাউল হক।
এখন এসব প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গভাবে তদারকি যাতে হয় সে বিষয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর থেকে কিন্তু এ ধরনের ঘটনা আর কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমরা লক্ষ্য করিনি।’
আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের বিষয়ে হক বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানে আদালতের নিয়োগ দেয়া বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে সেখানে তারা একটা প্ল্যান অনুযায়ী আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিচ্ছে। আর অন্যগুলোতে ব্যক্তিগত আমানতকারীদের টাকা ফেরতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিছু প্রতিপালিত হচ্ছে, কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।’
‘এ খাতের সমস্যা নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, আশা করি ভবিষ্যতে এর গভর্নেন্স ও ম্যানেজম্যান্ট দুটোই আস্তে আস্তে উন্নতি করবে,’ বলেন তিনি।
যা বলছে লিজিং কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন
এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন।
আর্থিক কেলেঙ্কারি, খেলাপি ঋণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই খাতের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে এই সংস্থাটি।
সঙ্কট কাটাতে নানা ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান সংগঠনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার ভুঁইয়া।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এটি যাতে আরো না বাড়ে সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে খেলাপি ঋণ না হয় তাই ক্রেডিট রিস্ক এসেসম্যান্ট করা হয়েছে।’
আইনের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান এই আইনে রয়েছে, সেটি নিয়েও কাজ করা হচ্ছে যাতে দ্রুত এটি কার্যকর করা যায়।’
একইসাথে এই সেক্টর ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে ও মনে করেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা