ঈদে ঢাকা ছাড়তে যাত্রীদের অতিরিক্ত গুনতে হবে ৯৮৪ কোটি টাকা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৪৯
আসন্ন ঈদুল ফিতরে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ঢাকা ও আশেপাশের অঞ্চলের প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের বিভিন্ন রকমের তৎপরতা দেখা গেলেও এবারে ঈদযাত্রায় শুধু ঢাকা ছাড়তেই যাত্রীদের ৯৮৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৩ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা থেকে দেশের সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে ঈদযাত্রা পরিস্থিতি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী সেবার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করে সংগঠনটি।
এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি যাত্রী নৌ-পথ ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ঢাকার সদরঘাট ও নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরসহ বিভিন্ন ঘাট দিয়ে প্রায় ৬০ লাখ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। যাত্রী প্রতি গড়ে ৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গড়ে যাত্রী প্রতি ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া আদায় হলে ঈদের আগে এসব যাত্রীদের ১২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে।
এদিকে রাজধানীতে অটো ব্যবহার করতে গিয়ে প্রত্যেক যাত্রীকে গড়ে প্রতি ট্রিপে ২০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ঈদে আগে রাজধানীতে চলাচলকারী ২৫ হাজার সিএনজি চালিত অটোরিকশায় প্রায় ৭০ লাখ ট্রিপ যাত্রীকে ১৪০ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।
ইজিবাইক, মোটররিকশা, প্যাডেল চালিত রিকশা ঈদ বকশিসের নামে যাত্রী প্রতি গড়ে ২০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ১০ লাখ ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, প্যাডেল চালিত রিকশা ১৪ কোটি যাত্রী ব্যবহার করতে পারে। এতে যাত্রীদের ২৮০ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।
এছাড়াও রাজধানীতে চলাচলকারী ৭ হাজার লেগুনা নামে পরিচিত হিউম্যান হলারে ঈদের আগে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে ঈদ বকশিসের নামে গড়ে প্রায় ২০ টাকা ভাড়া বাড়তি দিতে হবে। সেই হিসেবে ঢাকার লেগুনায় কেবল ১৬ কোটি টাকার বেশি বাড়তি ভাড়া আদায় হবে।
এবারের ঈদে লম্বা ছুটির কারণে ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত পরিবহন প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসে প্রায় ৩০ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হচ্ছে। ১৫ লাখ যাত্রীকে ভাড়ায় চালিত যানবাহনে ঈদে বাড়ি যেতে ট্রিপ প্রতি গড়ে ৩৫০০ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সেই হিসেবে এই পরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীদের ১১২ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।
এবারের ঈদে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার রুটে ৩০ লাখ যাত্রীর যাতায়াতে যাত্রী প্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সেই হিসেবে বাসের যাত্রীদের ৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটির পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেছে, প্রতি বছর ঈদে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী সিটি বাসগুলো ঈদের ২ দিন আগে থেকে যেকোনো গন্তব্যে গেলে ঈদ বকশিসের নামে ৫০ টাকা হারে যাত্রীর মাথাপিছু ভাড়া আদায় করে থাকে। এবারও ঈদের আগের ২ দিনে ঢাকার ৪ হাজার সিটি বাসে ৪৮ লাখ ট্রিপ যাত্রীর কাছ থেকে গড়ে মাথাপিছু ৩০ টাকা হারে বাড়তি নিলে এইখাতে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা যাত্রীদের বাড়তি গুনতে হবে।
এবারের ঈদে প্রায় ১২ লাখ যাত্রী মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। তাদের ৭০ শতাংশ রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলে যাত্রী প্রতি গড়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০০ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে ২৫ কোটি ২০ টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এছাড়াও ট্রেনে ট্রেনের ছাদে, ইঞ্জিনে, দুই বগির মাঝে, কোচের ভেতরে বিনা টিকিটে যাতায়াত করবে আরও প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার যাত্রী।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, এসব ট্রেনে কর্মরত টিটিই, গার্ড, সরকারি-বেসরকারি স্টুয়ার্ড, বেসরকারি ক্যান্টিন অপারেটরের লোকজন, ট্রেনে দায়িত্বরত জিআরপি, এনআরবি ও স্টেশনে দায়িত্বরত টিকিট চেকারদের যাত্রীপ্রতি গড়ে ৩০০ টাকা হারে ১১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে।
আকাশ পথে সরকারি-বেসরকারি উড়োজাহাজে ঈদের ১০দিন আগে থেকে কোনো কোনো পথে দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। যাত্রী প্রতি গড়ে ৩৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া দিলে ৩৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া লুটে নেবে।
এছাড়াও সদরঘাট নদীবন্দরসহ বিভিন্ন লঞ্চ ও খেয়াঘাটে নৌ-পথে যাতায়াত ও খেয়া পারাপারের যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে ঈদ উপলক্ষে ২ টাকার মাসুল ঘাট ইজারাদারের লোকজন ১০/২০ টাকা হারে আদায় করে থাকে। এ সময়ে পণ্য নিয়ে খেয়া পারাপার বা লঞ্চে আরোহণে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত কুলি মজুরি চার্জ দাবি করা হয়। খেয়া পারাপারে ঈদবাজারের প্যাকেট প্রতি মাসুল দাবি করা হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে, এবারের ঈদে সদরঘাট-নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের আশেপাশে খেয়া পারাপারে ১৪ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হবে। এসব যাত্রীর মাথাপিছু ১০ টাকা হারে বাড়তি হিসেবে ১৪০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হবে যাত্রীদের।
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা