৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বিলস’র গবেষণা

করোনায় শ্রমিকের আয় কমেছে ৮১ শতাংশ

করোনায় শ্রমিকের আয় কমেছে ৮১ শতাংশ - ছবি - সংগৃহীত

করোনার লকডাউনে তিনটি খাতের শ্রমিকদের আয় গড়ে ৮১ শতাংশ কমেছে। সবচেয়ে বেশি পরিবহন শ্রমিকদের ৯৬ শতাংশ এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের আয় কমেছে ৮৩ শতাংশ। ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকানপাট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের ৮৭ শতাংশ চাকরি হারিয়েছেন। তাদের ৭ শতাংশ এখনো বেকার এবং গড়ে তাদের আয় কমেছে ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্সের এক গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ৩৬ শতাংশ শ্রমিক করোনার টিকা নিয়েছেন আর ৬৪ শতাংশ শ্রমিক এখনো টিকার আওতার বাইরে।

ধানমন্ডির বিল্স সেমিনার হলে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকানপাট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের উপর সাম্প্রতিক লকডাউনের প্রভাব নিরূপণ’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল নিয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বিল্স উপপরিচালক (গবেষণা) মো: মনিরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বিল্স ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন, পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ এবং নাজমা ইয়াসমীন প্রমুখ।

গবেষণায় শ্রমিকদের করুণ জীবনচিত্র তুলে ধরে বিলস ১০ দফা সুপারিশ করে। সুপারিশে বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেস প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ, একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনার আওতায় বেসরকারি খাতের শ্রমিকদেরকে ক্রমান্বয়ে পেশা উল্লেখসহ পরিচয়পত্র প্রদান, দুর্যোগকালীন বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদেরকে সহায়তার জন্য একটি সঠিক ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ, অগ্রাধিকারভিত্তিতে, বেসরকারি খাতের শ্রমিকদেরকে করোনা টিকা প্রদান নিশ্চিত করা; বেসরকারি খাতের শ্রমিকদেরকে সামাজিকভাবে সুরক্ষার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বীমা ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং মহামারীর বাস্তবতায় বেসরকারি খাতে নিয়োজিত পরিবহন শ্রমিক, হোটেল-রেস্তোরাঁ শ্রমিক এবং দোকান শ্রমিকদেরকে সুরক্ষা দেয়া।

গবেষণায় দেখা গেছে, লকডাউনে (৫ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত) চাকরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৭ শতাংশ শ্রমিকের। সবচেয়ে বেশি পরিবহন শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশ, দোকানপাট শ্রমিকদের ৮৩ শতাংশ এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের ৮২ শতাংশ কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লকডাউন পরবর্তী সময়ে ৯৩ শতাংশ শ্রমিক চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছেন, ৭ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার। তবে লকডাউন সময়ে এসব খাতে খণ্ডকালীন শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বেড়েছিল ২১৫ শতাংশ। অন্য দিকে লকডাউনে তিনটি খাতে কার্যদিবস কমেছিল ৭৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৯২ শতাংশ কার্যদিবস কমেছে পরিবহন খাতে। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে অবশ্য কাজের চাপ বেড়েছে, কার্যদিবস এবং কর্মঘণ্টা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।

বিলসের গবেষণায় বলা হয়, লকডাউনে শ্রমিকদের পরিবারে আয় ও ব্যয়ের ঘাটতি ছিল প্রায় ৭৭ শতাংশ, সর্বোচ্চ ৯৭ শতাংশ পরিবহন এবং সর্বনিম্ন ৪৬ শতাংশ খুচরা দোকান শ্রমিক পরিবারের। ২০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার সম্পত্তি বিক্রয়, খাবার কমিয়ে দেয়া এবং সন্তানদের কাজে পাঠানোর মাধ্যমে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। এ ছাড়া ৮০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার ধার করে এবং সঞ্চয় কমিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে সঞ্চয় কমেছে ৬৪ শতাংশ এবং সঞ্চয়কারী কমেছে ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া লকডাইনে উল্লেখিত তিনটি খাতের শ্রমিকদের মাত্র ১ শতাংশেরও নিচে সরকারি সহায়তা পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে কম মূল্যে খাদ্যসহায়তা এবং নগদ টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement